বর্ষাকাল চারিদিকে পানি থৈথৈ।অনেক খানি বিল পার হয়ে, লুংগি মথায় বেধে স্কুলে আসা যাওয়া চলতে থাকে।
রাস্তায় যওয়ার পথে পিছনে বাচ্চারা, মানুষ বলাবলি করে, পালা বারেক ঐ যে কাসেমের পালা বারেক।
জিদে ব্যাথায় বর্ষার বিলের পানিতে মিশে যেতো অসহায় কিশোর বারেকের চোখের পানি।
বাবা কাসেম বড়ো ভালো মানুষ। মা হালিমা, যে মার কোন তুলনা নেই।
ক্লাস এইট এ উত্তীর্ন হলো।একাকী জীবনের বোঝা টেনে এতূদুর আসা। বন্ধু নেই,ভাই বোন নেই।
মা বাবা যতই ভালো বাসুক মনের মধ্যে তুফান চলতে থাকে, আমি আসলে কার সন্তান? কে আমার মা বাবা?
স্কুলে যাওয়ার পথে, দুমকি বাজারের কাছে এক মহিলা প্রতিদিন দাড়িয়ে থাকেন। একই জায়গায় দাড়িয়ে অপলকে বারেক কে দেখতে থাকেন।
সহপাঠী আজম বলেঃঐ যে মহিলা দাড়িয়ে প্রতিদিন তোকে দেখে, উনি কে জানিস? বারেক বলেঃ জানি না তো। কে উনি? আজম বলেঃ উনিই তোর আসল মা।
সাথে সাথে আসমান জমিন এক হয়ে যায়।মাথা ঘুরতে থাকে।
স্কুলে না ঢুকে সমস্ত শক্তি দিয়ে বাড়ির দিকে দৌড়াতে শুরু করে।
মনে মনে বলতে থাকে, আমার মা একজন'ই আমার অন্য কোন মা নেই।নেই নেই। ঐ মুখ কোনদিন দেখতে চাইনা।
ততদিনে বারেক নিজের জীবন কাহিনি শুনেছে।
ভাবতে থাকে, সেদিন যদি শিয়াল খেয়ে ফেলতো? এতিম খানায় কেনো
দিলোনা? সারা জীবনের অপমান যেনো তীর হয়ে বুকে বিঁধতে থাকে।
এরই মধ্যে আজম এর সাথে বারেক এর বন্ধুত্ব হয়ে যায়।টিফিন এর ছুটিতে আজম বসায় নিয়ে যায়।
এক সময় বারেক বুঝতে পারে, আজম দের বাসায় না গেলে মন কেমন যেনো করে,অস্থির লাগে।
কারণ হলোঃ আজিজের ছোট বোনটা।
বার চৌদ্দ বছরের এক পেচের শাড়ি পরা মেয়েটা কখন যে সমস্ত মন প্রান জোড়ে বসে আছে টেরই পাননি।
টিফিন এর সময় বাসায় গেলে, সাথে সাথে এক গ্লাস লেবুর শরবত এনে হাতে দিতো।কষ্ট করে আমড়া পেড়ে হাতে দিয়ে বলতোঃ খাইয়েন কিন্তু।
বাধভাঙ্গা ভালোবাসা এগিয়ে যেতে থাকে।
একা বারেক আগামীর স্বপ্ন বুনতে থাকে।এই বুঝি জীবনের সমস্ত গ্লানি মুছে যাবে।
টিফিন টাইম এ একবার যাওয়া চাই, এক নজর দেখা চাই।
স্বপ্নেরা বারেকের সরল মনটা নিয়ে খেলতে থাকে।
ততদিনে আজম বুঝে ফেলে রোমিও জুলিয়েট পার্ট টূ দুমকি তে শুরু হতে যাচ্ছ।
বারেক বুঝতে পারে আজম কিছুটা দুরত্ব বজায় রাখছে।
(বারেক এর বন্ধুর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে)
দেখা যাক নিয়তি কোথায় নিয়ে যায়।
চলবে...
সানবিডি/ঢাকা/এসএস