পেঁয়াজের পিছু নিচ্ছে অন্য পণ্যেরা
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-১১-৩০ ১৬:৫৮:৪৯
দু’-একটি ছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর দাম বৃদ্ধির যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা দেখে অতিমুনাফার সুযোগ নিচ্ছে অন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের অসহযোগিতার কারণে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এটি দেখে অন্য ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এক কথায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এই কথাগুলোই বলছিলেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
এটি কঠোরভাবে সরকারের দমন করা উচিত। এখন কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ক্যাব সভাপতি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের চড়া দামের কারণে ভোক্তারা চাপে আছেন। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট অনেক বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সংশ্নিষ্ট সব সংস্থার যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সাম্প্রতিকালে কৃষিপণ্যে অস্থির বাজার পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষি পণ্যগুলোর দেশে উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও কেনাবেচার সব তথ্য সংগ্রহ করে প্রকাশ করা উচিত। একই সঙ্গে বাজারে একটি শক্তিশালী পণ্য সরবরাহ কাঠামো দরকার। একই সঙ্গে সব পর্যায়ে বেচাকেনার তথ্য প্রকাশে বাধ্যবাধকতা দেওয়ার সময় এসেছে। এটা করা সম্ভব হলে অনেক ক্ষেত্রে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। খাদ্যনীতি মনিটরিং ইউনিটের চাল ছাড়াও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। তাদের মনিটরিং জোরদার হলে এবং তথ্য প্রকাশ পেলে বাজার কারসাজি কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
আলু ছাড়াও বাড়ছে ময়দার দাম। বাজারে খোলা ময়দার দামও কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বুলবুলের কারণে জাহাজের গম খালাসে দেরি হওয়ায় কিছুটা ঘাটতিতে দেশের বাজারে গমের দাম বেড়েছে। এতে ময়দার দামও বাড়ছে। এখন খোলা ময়দা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এ ছাড়া আমদানি করা নেপালি মসুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা হয়েছে। দেশি ডাল একই হারে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজের অস্থিরতার মধ্যে চিনির কেজিতে ছয় টাকা ও ভোজ্যতেলের লিটারে পাঁচ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আলুর দামও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকা আলু এখন কেজি ৩০ টাকা হয়েছে। আর গুদামে তা ১৫ থেকে ১৬ টাকা। আর নতুন আলু এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আলুর দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বাড়ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, হিমাগারে পর্যাপ্ত আলুর মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন আলু বাজারে এসেছে। এবার কোনো ঘাটতি হবে না। শেষ সময়ে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতে কোল্ডস্টোরেজে আলু কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম সমানতালে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আশ্বাস দিলেও কমেনি চালের দাম। কেজিতে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খুচরা বাজারে এখন মিনিকেট চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা, ঊনত্রিশ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির আগে মিনিকেট চাল ৪১ থেকে ৪২ টাকা, নাজির ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আটাশ ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, ঊনত্রিশ ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, স্বর্ণা চাল ২৬ থেকে ২৭ টাকা ছিল।
সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা পণ্য শুকনা মরিচের দাম কেজিতে গড়ে ৫৫ টাকা ও আস্ত হলুদের দাম গড়ে ৩৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ মানভেদে ২২০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দু’সপ্তাহ আগে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল। এখন হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা আগে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা ছিল। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পরপরই আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। এখনও ওই চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি চীনা রসুন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা ও দেশি রসুন ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি পুরোনো আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও নতুন আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং আমদানি করা আদায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমদানিকারক ও বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত এতদিন রপ্তানিকারক থাকলেও এখন আমদানি করছে। এতে দাম বাড়ছে। তবে পাইকারি বাজারে এলাচের কেজিতে ৩০০ টাকা বাড়ছে বলে দাবি করেন তিনি। ভুটানে কম দাম, দেশে কেন বেশি- এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভুটানের এলাচ বড়। দেশে বিক্রি হওয়া এলাচের মান আলাদা।
গত সপ্তাহে ভুটানের গণমাধ্যম কুয়েনসেল অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এলাচের দাম কমছে। ভুটানের অন্যতম এ মসলাপণ্য প্রধানত ভারত ও বাংলাদেশে রপ্তানি হয়। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এ দুই দেশে এলাচের চাহিদা কমে যাওয়ায় মন্দা কাটছে না।
গত বছরের শুরুর দিকে প্রতি কেজি এলাচ যথাক্রমে ৫৭০ ও ৮৪০ গুলট্রামে (স্থানীয় মুদ্রা) বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বড় এলাচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৪৬০ গুলট্রাম, আর ছোট এলাচ ৪১০ থেকে ৪৩৫ গুলট্রামে। এ হিসাবে বাংলাদেশি টাকায় দেশটিতে দাম রয়েছে বড় এলাচ ৫৩৩ থেকে ৫৪৫ টাকা এবং ছোট এলাচ ৪৮৫ থেকে ৫১৫ টাকা।
পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক থাকার সুযোগ নিয়ে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা তুলছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্তত এক ডজন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দেশজুড়ে সব মানুষের নজর পেঁয়াজের দিকে। এ সুযোগে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই চাল, ডাল, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, এলাচ, আলু ও মুরগিসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পণ্য কিনতে নিয়মিত বাড়তি ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। একই সঙ্গে পেঁয়াজও কিনছেন ১৭০-২২০ টাকায়। বর্তমানে বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এর পরও নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু চক্র।
সপ্তাহের ব্যবধানে মসলা পণ্য এলাচের দাম কেজিতে ৬০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়, যা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী আগের সপ্তাহে ছিল দুই হাজার ৪০০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, শীত মৌসুমে গরম মসলার চাহিদা বাড়ে।
এ সময় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকায় ইতোমধ্যে বাজারে চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগে পাইকারি ও আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই বড় ব্যবসায়ীরা অন্যান্য সময়ের মতো একই যুক্তি দিচ্ছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস