একজন রাজীব এর জীবনী-১১

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-১১-৩০ ২২:২৬:৫২


রাজীব সাহেবের পাশাপাশি আমাকে ও যুদ্ধ করতে হয়েছে। সংসারে নিবেদিত প্রান থেকে ও আমার রাস্তায় কাঁটা এসেছে। আমাকে ও অপেক্ষা করতে হয়েছে দিনের পর দিন।

এই অপ্রিয় প্রসঙ্গ টানতে দ্বিধা ছিলো। আবার ভাবী, আমি তো সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তারপরও আমি কিছু কথা এড়িয়ে গিয়েছি। যাদের কথা এড়িয়ে গেলাম, তারা জীবিত। আমার কলমের আঘাতে কেউ ছোট হবে, এমন কাজ আমি করতে পারি না।

আমাদের টাকা পয়সার অভাব রইলো না। রাজীব সাহেব আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাইকে দান করতে থাকেন। আমিও যা পারি করি। টাকা আসা ভালো, কিন্তু অনেক সময় এই টাকাও অনর্থের মূল হয়ে জীবন এলোমেলো করে দেয়।

টাকা আসলো, আকাশ ছোঁয়া সম্মান, সাথে টাকা পিপাসু মহিলা। আমার অদম্য জেদ আর ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, আমি জিতে গেলাম। মহিলার মুখোশ খুলে গেলো, রাজীব সাহেব বুঝতে পারলেন।

ক্ষমা চেয়ে বললেনঃ তুমি তো আমার হুরপরী। তুমার জায়গা কেউ কোনদিন নিতে পারবে না। ঐ মহিলার সাথে সাথে কাজ করলেও আর কোনদিন ফিরে তাকাননি। উনার জীবনটাই ছিলো পরীক্ষার পর পরীক্ষা। মহিলা চেয়েছিলেন সংসার ভেঙ্গে উনি আসবেন।

এখনেও “রাখে আল্লাহ মারে কে” সবার জীবনেই এমন কিছু ঘটনা থাকে। তখন প্রচন্ড অভিমান হয়েছিলো। এত বছর পরে আর কষ্ট লাগে না। ক্ষমা করে দিয়েছি। এই লেখা যদি কোনদিন বইয়ের আকার নেয়, সেদিন বিস্তারিত লিখবো।

আমরা লালমাটিয়া থাকতেই ৯২ সালে আমাদের তৃতীয় পুত্র দীপ এর জন্ম হয়। কতো কথা কতো স্মৃতি চোখে ভাসে। আমি প্রায় দিনই বোয়ার বোরকা পরে বেবীট্যাক্সি নিয়ে রাজীব সাহেবের পিছু নিতাম। উনার পিছনে আমিও অফিসে ঢোকতাম।

যিনি আগে থেকে অফিসে রাজীব সাহেবের অপেক্ষায় থাকতেন, আমাকে দেখে তরিগরি করে দৌড়। এখনও মনে পড়লে একা একাই হাসি। টেবিলে রাখা মার্বেল পাথরটা হাতে নিলেই আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলতেন,আচ্ছা আগে ওটা রাখো।

বলো কি খাবে, তোমার নান আর চা আনি? আরে এসব কিছু না, খামাকা কেনো যে এরা আসে। তুমি তো আমার হুরপরী। হুরপরী শুনলে আমার রাগ শেষ। বাসায় চলে আসতাম। জয় বিজয় অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ে।

ওদের স্কুল দীপের বেড়ে ওঠা সময় কখন ৯৫ সালে চলে আসলো টেরই পেলাম না।
আট হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া। ভাড়া বাড়ীতে আর কতো? এবার একটা নিজের বাড়ী হোক। লালমাটিয়া বাড়ি কেনার সামর্থ আমাদের নেই। বললেন উত্তরা বাড়ি দেখ।

সকালে জয় বিজয়কে স্কুলে দিয়ে, বেবীট্যাক্সি নিয়ে উত্তরার অলি গলিতে সারাদিন বাড়ী খুঁজি। উত্তরা এক নম্বর সেক্টরে দুতলা বাড়ী পেয়ে যাই। ৪৪ লক্ষ টাকা দাম। আমার কাছে যা ছিলো রাজীব সাহেবের যা ছিলো দুজনে মিলে স্বপ্নের বাড়ি কিনি। রাজীব সাহেব একদিনই বাড়ি দেখেছিলেন। আমরা লালমাটিয়া থেকে উত্তরা চলে আসি। কে জানতো এখানেই আমার জন্য দুঃখরা লাইন বেঁধে অপেক্ষা করছে। চলবে…

পূর্বের পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন 

অভিনেতা রাজিবের জীবনী কাহিনী

সানবিডি/ঢাকা/এসএস