৯৫ সালের কোন এক রাতে ওপর মহল থেকে ফোন।জাসাসের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ।
চার বেলা শুটিং করার পরে আর হাতে সময় থাকে না,তারপর ও না করা গেলো না।
একে সারাদিন শুটিং, তারমধ্য রাজনীতি যোগ হলো।
সকাল হলেই মানুষ বসার জায়গা থাকে না,ফিল্ম,রাজনীতি দুই দিক সামলাতে গিয়ে হিমসিম খেতেন।
কোন কোন সময় দুইদিন পর বাসায় আসতেন।
বাংলাদেশের তিন’শ আসন। তিন’শ আসন থেকেই অনুরোধ আসতে থাকে একটা ঘন্টা মিটিং করে দেওয়ার জন্য।
সময় সংকুলান এর কারণে শুরু হলো হেলিকপ্টার দিয়ে আনা নেওয়া।
এক ঘন্টা বক্তব্য দেওয়ার সিডিউল চাই সবার চাই। ভোরবেলা থেকে ড্রইং রুমে এ অপেক্ষা চলতো,এমপি মন্ত্রী দের।
৯৮ সালে আমাদের বড় কন্যা রোজা আসলো,২০০০সালে রাইসা আসলো।
জয় বিজয় কে হারানোর হাহাকার রয়েই গেলো।
দেখতে দেখতে দিন চলে যায় তার আপন নিয়মে।
২০০৪এর ৩১ শে মার্চ দীপ এর জন্মদিন দুই ছাদে মেহমান গিজগিজ করছে।
৯টার দিকে হাতে ডাক্তার এর ফাইল নিয়ে রাজীব সাহেব আসলেন। তিন মাস আগে থেকে পেটে হালকা ব্যাথা ডিসেন্ট্রি টাইপ।
চার পাঁচজন ডাক্তার দেখানো হলো,সব ডাক্তার গ্যাস এর ঔষধ দিয়ে বলে দিলো কিছু হয়নি।
কি দূর্ভাগ্য কোন ডাক্তার রোগ ধরতে পারলো না।
রোগ ধরতে পারলে হয়তো এই মহান অভিনেতা আমাদের মাঝে থাকতেন।
আমাকে আড়ালে ডাকলেন।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম,নার্ভাস।
ডাক্তার মহসিন সাহেব এর কাছে গিয়েছিলেন। ডাক্তার বলেছেন,পেটে টিউমার। এখন কি হবে? আমি বলিঃ কিচ্ছু হবে না,সব ঠিক হয়ে যাবে।
কোনমতে মেহমান বিদায় করে, রাতেই সিদ্ধান্ত নিলাম ১ লা এপ্রিল বম্বে নিয়ে যাবো।এক ঘন্টায় ভিসা হলো।
তিন বাচ্চা কাজের লোকের হাতে রেখে আমি রাজীব সাহেব কে নিয়ে বম্বে রওয়ানা দিলাম।
(এইটুকু আমি আগেই লিখেছিলাম পাঠকের সুবিধার্তে কপি পেস্ট করলাম)
বম্বে পৌছে চিকিৎসা শুরু হলো।
বায়োপসি রিপোর্ট এর অপেক্ষা। রিপোর্ট আসলো মরণ ব্যাধি ক্যানসার বাসা বেঁধেছে।ওরাল কেমো শুরু হলো,এক নাগাড়ে দুই মাস। দুই মাস পর যখন ঢাকা ফিরলাম,আমার বাচ্চারা মলিন বেশে যেনো এক একটা কংকাল।
দুই ঘন্টা পর পর তরল খাবার দিতে হয়,দুই মাস কেটে গেলো।ঢাকা আসলাম, সুস্থ আর হলেন না।
সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, আবার বম্বে নয় মাস কেটে গেলো।এই নয় মাস আমি এক ঘন্টার বেশি ঘুমাইনি।
আমি ছাড়া কিছু বুঝতেন না।
এক মুহুর্ত সরতে দিতেন না।
চিকিৎসা চলার সময় কোটি টাকা খরচ হয়ে গেলো।
হাতে আর টাকা নাই।সবাই বললেন পেপার টিভিতে সাহায্যের আবেদন করেন।ততকালীন প্রধানমন্ত্রী র সাথে দেখা করি,অনেক কথা হয়।মেডাম দুই লাখ টাকা দিলেন।
বললাম মেডাম এই টাকায় হবেনা
মেডাম বলেছিলেন, পেপারে টিভতে সাহায্যের আবেদন করে দাও।
সেদিন মন ভারাক্রান্ত হয়েছিলো।
যে মানুষটা এত দান করেছে তার চিকিৎসা করাবো ভিক্ষা করে? যে লোকটা কোটি টাকা দলের জন্য করচ করেছে, লক্ষ মানুষকে সাহায্য করেছে তার চিকিৎসা আমি ভিক্ষা করে করাবো না।
ঐ দুই লাখ টাকা আমি নিতে চাইনি।রাজীব সাহেব এর অনুরোধে রাখি।এক রাতের সিদ্ধান্তে আশুলিয়ার মেইন রোডের সাথে জায়গা অর্ধেক দামে বিক্রি করে পরের দিন সিংগাপুর নিয়ে যাই।আমি জীবনে না খেয়ে থেকেছি, ভিক্ষা করিনি, অনৈতিক কাজ করিনি।মিথ্যা বলিনি,এখনও বলিনা।
চলে যাওয়ার আগে বারবার ক্ষমা চাইলেন।বাড়ীর দলিল, যেখানে যা আছে আমার নামে গুছিয়ে দিলেন।২০০৪ এর ১৪ই নভেম্বর একজন নামাজি, দানশীল দয়াবান,শক্তিশালী অভিনেতা চলে গেলেন।
বাংলাদেশের যখন
যেখানেই শুটিং মিটিংয়ে গিয়েছেন মসজিদের সিমেন্ট, মাইক কিনে দিয়েছেন।
এফডিসিতে এমডি থাকা কালিন অনেক লোকের চাকরি দিয়েছেন। অনেক এমপি র মিটিং তো করেছেনই টাকাও দিয়েছেন।
কষ্ট করে কামাই করা বেশির ভাগ টাকা জাসাস বাঁচিয়ে রাখার জন্য খরচ করেছেন।রাজীব সাহেব মারা যাওয়ার পর আমার বাচ্চাদের খবর কেও নেয়নি,আমার কথা বাদই দিলাম।রাজনৈতিক নেতারা বা ফিল্ম এর অভিনেতারা।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস