অনেক কিছুই লেখার থাকে, লেখা হয়ে উঠে না।সব কথা সময়মত মনেও আসে না। রাজীব সাহেবের ছোট বেলা, পাশের বাসার চাচার উঠান পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়।
সেই চাচা বলতেন : কিগো মিয়া তুমি তো পড়াশোনা করতে করতে আমার উঠানের ঘাস মেরে ফেলবে। বড় হয়ে আমাকে চাকরি দিও হাহা করে হাসতেন। ছোট্ট বুকে জ্বালা ধরা হাসি। উনি দেখিয়ে দিতেন, একটা বাচ্চাকে কত রকমের অপমান করা যায়। ঐ চাচার কাজ ছিলো সারারাত যাত্রা দেখা, দিনে উঠানে বসে হুক্কা টানা। এই ধরনের জীবন যাপনে এক সময় উনার জায়গা জমি সব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যান।
রাজীব সাহেব তিতাসে থাকা কালে একদিন ঢাকা আসলেন। উনার সব অবস্থা শুনে বললেন, এখন কি করেন। চাচা বলেন, বাবা নদীতে মাছ ধরে খাই। রাজীব সাহেব তখনই তিতাস এ চাচার চাকরির ব্যবস্থা করলেন। ঐ চাকরির টাকায় চাচা বড় দোতলা বাড়ি করলেন, ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে সুখে শান্তিতে জীবনের শেষ দিনগুলো পার করলেন।
কেরামত চাচা একদিন ফোন করে বললেন উনার বাসায় যাওয়ার জন্য। রাজীব সাহেবের সময় না থাকায় চাচা আমাদের বাসায় আসলেন। সেই টেডী রাজীবের বাসায়। এর পর মাঝে মাঝেই আসতেন। রাজনৈতিক ব্যাপার গুলো নিয়ে রাজীব সাহেব এর পরামর্শ নিতেন।
আসলেই বলতেন, বৌমা তোমার হাতের সেই কাঁচ কলা দিয়ে সিং মাছের ঝোল খাবো। মারা যাওয়ার আগে ও বলতেন, বৌমার হাতের সিং মাছের ঝোল খাবো।
সেই মামী যিনি পাকিস্তানি আর্মিদের হাত থেকে রাজিব সাহেবকে বাঁচিয়েছিলেন এক সময় অসুস্থ হলে ঢাকায় আমার বাসায় আনি। যথা সাধ্য মামীর চিকিৎসা করে সেবা যত্ন দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। মামীর নাতনীকে চাকরি ঠিক করে দিই, টংগী চেরাগ আলি সরকার সাহেবের হাই স্কুলে।
লালমাটিয়া থাকতে আজম আসলো অসুস্থ হয়ে, বউ বাচ্চা সহ পাঁচজন। পিজিতে ভর্তি করালাম। ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়লো।আমার হাতের
খাবার ছাড়া খেতেন না। সকালে বাজার করে রান্না করে বাচ্চাদের বাসায় রেখে প্রতিদিন পিজিতে খাবার নিয়ে যেতাম।
যথা সাধ্য উনার সেবা যত্ন করেও উনাকে বাঁচাতে পারিনি। আমার হাতেই মারা গেলেন। সমস্ত খরচ দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিই। আজমের সেই বোনের ছেলেকে ঢাকা এনে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়। তাদের সেই রমরমা অবস্থা না থাকায় আজমের বোন, বোন জামাই ঢাকা আসে।অনুরোধ করে ছেলের চাকরির জন্য।
এখন ছেলে ভালো ইনকাম করে। ভালো আছে। কুলসুম মেম মোটামুটি ভালো আছে। রাজীব সাহেবের দুই ছেলেই বিয়ে করেছে, বউ বাচ্চা নিয়ে ভালো আছে। কিন্তু কুলসুম মেম বেচারী, তার নিজের বলতে তখনও কিছু ছিলো না আজও নেই। ছেলেরা ঠেলা ঠেলি করে দুইদিন এই ছেলর বাসায় ঠাই হলে আবার আর এক ছেলের বাসায় যেতে হয়।মেয়েদের আসলে নিজের বলতে কিছু নেই।
উনি ভালো নেই। আমি সব শুনি। কুলসুম মেমকে খবর পাঠিয়েছিলাম, ওখানে উনার অসম্মান হলে উনি যেনো আমার কাছে চলে আসেন। কথা দিয়েছি সম্মানের উঁচু জায়গাটা উনার জন্য থাকবে। উনি আসেন নি। এই সমাজের নিয়ম ভেংগে হয়তো উনি আসতে পারবেন না। তেমনি মা হালিমাকেও বলেছি, কষ্ট হলে যেনো আমার কাছে চলে আসেন।
আমার এই লেখা নিশ্চয়ই মাসুদ মামুন ও পড়ছে। অনুরোধ থাকবে ওরা যেনো ওদের মা'কে ভালো রাখে। নতুবা প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করবে না।
পরিশেষে বলবোঃ অমি সাহেবের সু নজর না থাকলে আমার এই লেখা এত বর্ণনা কোন কিছুই সম্ভব হতো না। অমি সাহেবের কাছে বরাবরই কৃতজ্ঞ।
নিঁখাদ ভালো মানুষ। ভালো থাকুক অমি সাহেব। আবার কখনো নতুন কোন লেখা নিয়ে আপনাদের দরবারে হাজির হবো। আপনাদের ভালোবাসায় আমি আমার পরিবার মুগ্ধ।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস