মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা বন্ধ নিয়ে ধোঁয়াশা
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-১২-০৫ ২২:০৯:৩৬
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা বন্ধ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। আসলে কারখানা কবে থেকে বন্ধ এই বিষয়ে নেই কোন পরিস্কার বক্তব্য। অন্যদিকে বন্ধ হওয়ার দুই মাস পর স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে কোম্পানিটি। আবার সরজমিনে গিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র।
জানা গেছে,চলতি মূলধন সংকটের কারণে এ বছরের অক্টোবর থেকেই কারখানা বন্ধ রয়েছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কারখানা বন্ধ হওয়ার দুই মাস পর প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। গত সোমবার বিকালে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় কোম্পানিটির চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের পাশাপাশি কারখানা বন্ধের তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা মঙ্গলবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, পাশাপাশি দুটি কারখান বন্ধ রয়েছে। এর একটি হলো মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ ও অন্যটি বাংলাদেশ মাস্টার প্যাক লিমিটেড। দুটি কারখানায় বন্ধ।
জানতে চাইলে ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধলোক সান বিডিকে বলেন, এই কারখানাটি আসলে বন্ধ হলো ঈদুল ফেতরের পর থেকে। এখানে আমার স্ত্রীর ভাই কাজ করতো। কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে সে এখন বেকার।
পাশে কথা হয় চায়ের দোকানদারের সাথে। তিনি সান বিডিকে বলেন, এই কারখানা বন্ধ রমজানের ঈদ থেকে। তবে ঈদুল আদ-হা (কুরবানির ঈদ) থেকে পুরোপুরি বন্ধ।
জানতে চাইলে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব দেওয়ান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া ঋণ অনাদায়ী হয়ে যাওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে পাওনা নিয়ে সমস্যার কারণে এ বছরের জুনের পর থেকেই আমাদের বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সুবিধা বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল কিনে উৎপাদন চালু রাখতে হয়েছে। এতে আমাদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। সুদসহ ব্যাংকের কাছে আমাদের ৪২ কোটি টাকার দেনা ছিল। এরই মধ্যে ঋণের ৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই আমরা এলসি খুলে কাঁচামাল আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।
কারখানা বন্ধ হওয়ার তথ্য দুই মাস পরে প্রকাশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো রকমে কারখানা চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু মূলধনের অভাবে অক্টোবর থেকে আর কারখানা চালু রাখা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি ব্যাংকের সঙ্গে অনাদায়ী ঋণের বিষয়েও আলোচনা চলছিল। আমরা মনে করেছিলাম ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সমস্যা দীর্ঘায়িত হবে না। ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে গেলেই যেকোনো মুহূর্তে আবার কারখানা চালু হয়ে যেত। এ কারণে কারখানা বন্ধের তথ্যটি সে সময় আর জানানো সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৪ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ। ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনার জন্য ২১ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল ২০ নভেম্বর। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৩ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৮৫ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪১ টাকা ৭১ পয়সা।
২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ৮ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ। ২০১৭ হিসাব বছরে ৭ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।
চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ২৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে, যেখানে এর আগের বছরে ৮৮ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২৮ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ৬১ পয়সায়।
প্লাস্টিক প্যাকেজিং উৎপাদক মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি করে। আর ১৯৯৭ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ বিভিন্ন ধরনের পলিপ্রপেলিন ওভেন ব্যাগ, লিনার ব্যাগ, ভ্যালু অ্যাডেড এফআইবিসি এবং তারপলিন উৎপাদন করে থাকে। ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৩৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ও ৭০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ।