শেয়ারবাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করবেন তার ৫ পরামর্শ
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-১২-০৯ ২০:০৬:৪৫
শেয়ারবাজারে সবাই বিনিয়োগ করতে চায়। অনেকে আবার হুট করে এসেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে থাকে। কোন কিছু না জেনেই এ বিনিয়োগ করে তারা। বিনিয়োগের পর আশানুরূপ লাভ করতে না পারে না। অথবা নিজের পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। এ ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম আফফান ইউসুফের পাঁটি পরামর্শ। নিচে সানবিডির পাঠকদের জন্য পাঁচটি পরামর্শ তুলে ধরা হল:-
১. ঋণকে না বলুন, চিন্তামুক্ত থাকুন
শেয়ারবাজার এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ বাজার। এ বাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে বেশি মুনাফার সম্ভাবনা যেমন থাকে, তেমনি লোকসানের ঝুঁকিও প্রবল। এ জন্য শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকে সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শেয়ারবাজার সবার বিনিয়োগের জায়গা নয়। এখানে বিনিয়োগ করতে হলে বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক। যদিও আমাদের বাজারে অনেক বিনিয়োগকারী বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা না নিয়েই বিনিয়োগ করে থাকেন। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আমার প্রথম পরামর্শ ঋণ করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করার। যেকোনো ধরনের ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই নিজেকে ঋণমুক্ত রাখা মানে ঝুঁকির মাত্রা কম। ঋণ করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে দুই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। প্রথমত সুদের হারের ঝুঁকি, অন্যটি মূলধন হারানোর ঝুঁকি। সাধারণত তারাই শেয়ারবাজারে ঋণ করে লাভ করতে পারেন, যাঁদের বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। কারণ, তাঁরা জানেন কখন, কী পরিমাণ ও কোন শেয়ারের বিপরীতে ঋণ নেওয়া যায়। আবার কখন ঋণ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।
২. ঋণমুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন
যদি আপনি নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবেন, তাহলে আমার পরামর্শ, তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির স্থিতিপত্র বা ব্যালান্সশিটে ঋণের দায় তুলনামূলক কম, সেসব কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করুন। যে কোম্পানির ঋণ যত বেশি, সেই কোম্পানির মুনাফার ওপর তত বেশি চাপ থাকে। কারণ, মুনাফার একটি বড় অংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়। ঋণের দায় কম এমন কোম্পানি বাছাই করার ক্ষেত্রে সাত–আট বছরের স্থিতিপত্র ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। যদি দেখেন, কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম বা পুরোনো ব্যাংকঋণ ক্রমাগতভাবে কমে আসছে, তাহলে বুঝবেন কোম্পানিটির নিজস্ব আর্থিক ভিত্তি বেশ শক্তিশালী। কোম্পানি ব্যাংকঋণমুক্ত থাকলে অর্থনীতিতে খারাপ অবস্থা থাকলেও ওই কোম্পানির ব্যবসা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এ ছাড়া কম ব্যাংকঋণ আছে এমন কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে আমাদের বাজারে ভালো মৌলভিত্তির বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে, যাদের ব্যাংকঋণের পরিমাণ খুবই কম। তাই নিজেকে ঋণমুক্ত রাখার পাশাপাশি কম ঋণ আছে এমন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করুন।
৩. সঞ্চয়ের একটি অংশ শেয়ারবাজারে আনুন
আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তাহলে মাস শেষে সব খরচ বাদ দেওয়ার পর হয়তো একটু একটু করে সঞ্চয়ের মাধ্যমে কিছু অর্থ জমিয়েছেন। সেই সঞ্চয়ের পুরোটা কখনো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। মাস শেষে নির্ধারিত হারে মুনাফা পাবেন এমন কিছু আর্থিক পণ্যে সঞ্চয়ের অর্ধেক অর্থ বিনিয়োগ করুন। বাকি অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কিছুটা ভাগ্যবদলের ঝুঁকি নিতে পারেন। তবে সেই ঝুঁকি নেওয়ার আগে বাজার সম্পর্কে ন্যূনতম কিছু ধারণা থাকা চাই। আমাদের দেশে চাকরিজীবীদের জন্য সঞ্চয়ের সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ পণ্য এখন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে সুদহার কমানোর নানা চেষ্টা চলছে। যদি ঋণ-আমানতের সুদহার সত্যিই সত্যিই নয়-ছয়ে নেমে আসে, তাহলে ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেক লাভজনক হবে। কারণ, তাতে অন্তত বছর শেষে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই বিনিয়োগের আগে ওপরের পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনার ঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করি।
৪. কোম্পানির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকদের জানুন
আমাদের মতো দেশে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ওই কোম্পানির উদ্যোক্তা কারা, ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় কারা রয়েছেন। কারণ, আপনার বিনিয়োগের লাভ-ক্ষতি পুরোপুরি নির্ভর করছে তাঁদের ওপর। কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ নির্বাহীরা মিলে। তাই সেই লোকগুলো কতটা পেশাদার, সমাজে কতটা গ্রহণযোগ্য, তাঁদের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা কী, তা জানা জরুরি। যদি দেখেন, উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকদের সফল ও লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তবে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে আপনিও লাভের আশা করতে পারেন। অন্যথায় আপনার বিনিয়োগ শুরুতেই ঝুঁকিতে পড়বে। বিনিয়োগের আগে একটু ভালোভাবে খোঁজখবর নিলে উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া আপনার জন্য খুব কঠিন হবে না। যে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকেরা যত ভালো, সেই কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছতা ও সুশাসন তত উন্নত। তাই স্বচ্ছতা ও সুশাসন আপনার বিনিয়োগকে সুসংহত করবে।
৫. বিনিয়োগের কিছু অর্থ পেশাদারদের হাতে দিন
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিজেরা সরাসরি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন না। বিভিন্ন অভিজ্ঞ ও পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে তাঁরা বাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারী নিজেরাই বিনিয়োগ ও লেনদেন করেন। এর ফলে অনেকে লোকসানে পড়েন হরহামেশা। তাই আমার পরামর্শ, আপনি যে পরিমাণ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন বলে ঠিক করেছেন, তার অর্ধেক ভালো ও দক্ষ কোনো ফান্ড ম্যানেজারের হাতে তুলে দিন। বাকি অর্ধেকটা দিয়ে আপনি নিজে বিনিয়োগ করতে পারেন। তাতে আপনার ঝুঁকি কমবে অনেক। দক্ষ ফান্ড ম্যানেজার আপনার বয়স, আয় ও ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা বিবেচনায় আপনার অর্থ বিনিয়োগ করবেন। আমাদের বাজারেও অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞ ও পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার রয়েছে। শুধু আপনার হয়ে বিনিয়োগ করার দক্ষ ফান্ড ম্যানেজারটি খুঁজে নিতে হবে আপনাকেই। সূত্র: প্রথম আলো
এম আফফান ইউসুফ: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড
সানবিডি/ঢাকা/এসএস