আওয়ামী লীগ সরকার হচ্ছে তাগুত (ধর্মদ্রোহী) সরকার। আর এই সরকারের মুরতাদরা (ধর্মত্যাগী) বিএনপি জামায়াতের মুরতাদদের ফাঁসি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামপন্থী সশস্ত্র সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট)। আর এভাবেই শায়খ আবদুর রহমানদের শাস্তি প্রদানের সঙ্গে জড়িতরা আল্লাহর (!) পক্ষ থেকে শাস্তি পাচ্ছে বলে মনে করে সংগঠনটি। আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামীকে মুরতাদদের সর্দার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তারা। চলতি মাসে প্রকাশিত সংগঠনটির অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দাবিক’-এর ১২তম সংখ্যায় এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে জিহাদের পুনর্জাগরণের পথিকৃত হিসেবে জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও সংগঠনটির প্রয়াত প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতালীর নাগরিক তাভেল্লা সিজার, জাপানী নাগরিক কুনি হোশিও ও নাস্তিক ব্লগারদের হত্যা এবং হোসেনী দালানে (শিয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান) হামলা মুজাহিদরাই করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, কয়েক বছরের মধ্যেই ‘মুজাহিদ-আলেম’দের মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেকেই শাস্তি পেয়েছেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিদ্রোহের ফলে নিহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ শাসিত ‘তাগুত’ সরকার বিএনপি ও জামায়াতের ‘মুরতাদ’ সংসদ সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে। মুজাহিদ-আলেমদের মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে জড়িত এই নেতাদের একই ‘তাগুত’ আদালতে অপমান, কারাবন্দী, যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।
এ অবস্থাকে ইরাকে সাবেক মিত্র শিয়াদের হাতে (Rāfidī) প্রতিরোধকারী কাউন্সিলের (sahwāt) পতনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শিয়া সম্প্রদায় ও প্রতিরোধকারী কাউন্সিল মিলে তখনকার সরকার পরিচালনা করা হতো।
বাংলাদেশের নেতাদের এ থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর দেখানো পথে চলার আহ্বানও জানিয়েছে আইএস।
‘দ্য রিভাইভাল অব জিহাদ ইন বেঙ্গল’ (বেঙ্গলে জিহাদের পুনর্জাগরণ) শীর্ষক প্রতিবেদনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ‘মুরতাদ’ (ধর্মত্যাগী) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দলগুলোর পরিচালিত সরকারকে ‘তাগুত’ সরকার বলেও উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। বাংলাদেশকে বেঙ্গল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে আইএসের ম্যাগাজিনে।
প্রতিবেদনে আবু হুরাইরাহ (রা.)-এর বরাতে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসীর উদ্ধৃতি দিয়ে ‘মুরতাদ’রা আল্লাহর হুঁশিয়ারিকে অগ্রাহ্য করছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। হাদিসটি হল— ‘আল্লাহ বলেছেন, যারা আমার ওলীর (বন্ধু বা প্রতিনিধি) প্রতি শত্রুতা প্রকাশ করে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছি।’ বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সরকারগুলো আল্লাহর এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ইসলামী আলেম ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে।
আইএসের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে তাদের ঘোষিত খিলাফতভুক্ত ও এ অঞ্চলে তাদের নেতা মনোনীত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইএসের ওই আঞ্চলিক নেতার নাম প্রকাশ করা না হলেও বাংলাদেশের মুজাহিদরা ‘খলীফা ইব্রাহিমের’ আনুগত্য স্বীকার করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে আইএসের হামলা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থানও তুলে ধরেছে সংগঠনটি। বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতিকে অস্বীকার করলেও শিগগিরই তারা সাবেক বিএনপি সরকারের মতো বাস্তবতা বুঝতে পারবে।