শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ভিআইপিবির এমডির ৫ পরামর্শ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-১২-২৫ ১৩:১৮:৫৯
১. বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের আগে নিজেকে জানুন
যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজেকে জানাটা খুবই জরুরি। আর যদি হয় বিনিয়োগের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্তের গ্রহণের প্রশ্ন। তাহলে নিজের সামর্থ্য, সক্ষমতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার। কোন বয়সে আপনি কী ধরনের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বিনিয়োগ ঝুঁকি মোকাবিলায় আপনার শারীরিক ও মানসিক শক্তি বা সক্ষমতা রয়েছে কি না, সেটিও জানা জরুরি। তা না হলে আপনার বিনিয়োগ ঝুঁকি আপনার মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকিরও কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই আমার প্রথম পরামর্শ, শেয়ারবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে বিনিয়োগের আগে শেয়ারবাজারের বাইরে আপনার আয়রোজগারের উৎস, প্রকৃত সম্পদ, বয়স ও শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় নিন। আপনি যদি অবসরপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি হন, তাহলে আপনার জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ হতে পারে সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের মতো আর্থিক পণ্য। সাধারণভাবে যার বয়স যত কম, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা তার তত বেশি। বয়সের পাশাপাশি ঝুঁকি গ্রহণের জন্য দরকার মানসিক দৃঢ়তাও। দেখা গেল, আপনার হয়তো বয়স কম কিন্তু মানসিক দৃঢ়তা নেই, তাহলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সেটিকে একমাত্র উপার্জনের পথ বানাবেন না। যদি শেয়ারবাজারকে একমাত্র উপার্জনের ক্ষেত্র বানান, তাহলে যেকোনো সময় পারিবারিক জীবনযাপন বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে।
২. দৈনিক লেনদেনের মানসিকতা বর্জন করুন
আমাদের দেশে শেয়ার লেনদেন একধরনের ফ্যাশনেবল চর্চা, বিশেষ করে বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তখন এ চর্চা বেশি হয়। বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ারবাজারের লেনদেনকে মূল পেশা মনে করেন। এটিকেই উপার্জনের একমাত্র উৎস ভাবেন। তাঁদের এ ধারণা ভুল। আমার পরামর্শ, আপনি চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী হলেই কেবল আপনার সঞ্চয়ের একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন বেশি মুনাফার আশায়। অর্থাৎ আপনার উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট উৎস থাকতেই হবে। সঞ্চয়ের যে অংশটি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন, সেটিও করতে হবে অবশ্যই ভালো মানের কোম্পানিতে—যে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি অনেক শক্তিশালী, আবার ব্যবস্থাপনাও বেশ উন্নত। ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ভালো কোম্পানির শেয়ার যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনলে সেখানে মুনাফার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানির বাজারমূল্যের সঙ্গে আর্থিক ও মৌলভিত্তিকে বিবেচনায় নিতে হবে। তাহলে আপনার মুনাফার সম্ভাবনা বেশি। দৈনিক লেনদেনে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।
৩. স্রোতের বিপরীতে চলতে হবে
বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ গুরু হিসেবে পরিচিত ওয়ারেন বাফেটসহ আরও অনেকে স্রোতের বিপরীতে চলেই সেরা বিনিয়োগকারী ও প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী যখন শেয়ার বিক্রি করে দিতেন, তখন তাঁরা শেয়ার কিনতেন। আর যখন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনতেন, তখন তাঁরা বিক্রি করতেন। সেই বিবেচনায় যখন শেয়ারের দাম ক্রমাগত কমতে থাকে, তখন বিনিয়োগের ভালো সময়। আমাদের দেশে স্রোতের বিপরীতে চলতে পারা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। তাই যাঁরা স্রোতের বিপরীতে চলে বিনিয়োগ করতে পারবেন, তাঁদের অন্যান্য বিনিয়োগকারীর চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া সম্ভব। তবে বিনিয়োগ করতে হবে ভালো শেয়ারে।
৪. ধার ও ঋণের টাকায় বিনিয়োগ নয়
শেয়ারবাজার এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ বাজার। সেখানে ধার বা ঋণের টাকায় বিনিয়োগ করা মানে ঝুঁকি মাত্রাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলা। আমাদের বাজারে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী ধার ও ঋণ করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, যেটি মোটেই উচিত নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শেয়ারবাজারের মার্জিন ঋণের সুদহার অনেক কম থাকে। আমাদের দেশে ঠিক উল্টোটা। বাজারের প্রচলিত সুদহারের চেয়ে আমাদের দেশে শেয়ারবাজারের মার্জিন ঋণের সুদ অনেক বেশি। ধরা যাক, আপনি ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। সেখান থেকে মুনাফা পেতে হলে আপনাকে ১৫ শতাংশের বেশি মুনাফা করতে হবে। আমাদের বাজারের বাস্তবতায় সেটি খুবই কঠিন। আমার পরামর্শ, আপনার ধার বা ঋণের টাকায় তো বিনিয়োগ করবেনই না, উল্টো আপনার যদি কোনো ধারদেনা থাকে, তাহলে সেটি পরিশোধ না করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কথা ভাববেন না।
৫. পরামর্শদাতা সম্পর্কে সতর্ক থাকুন
আমাদের দেশে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী পরিচিতজনের কাছ থেকে শুনে শুনে শেয়ার কেনাবেচা করেন। শেয়ার কেনার জন্য আপনি যাঁর পরামর্শ নিচ্ছেন, তাঁর সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জেনে নিন। যিনি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন, বাজার সম্পর্কে তাঁর ধারণা, তাঁর সততা, তাঁর নিজের বিনিয়োগ ও স্বার্থের বিষয়ে জানা জরুরি। কারণ, প্রত্যেকের নিজস্ব এজেন্ডা রয়েছে। এমনও হতে পারে, আপনি যাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন, তিনি তাঁর নিজের স্বার্থেই পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই যখন কেউ আপনাকে কোনো শেয়ার কেনার পরামর্শ দেবেন, তখন সবার আগে বোঝার চেষ্টা করুন তাতে তাঁর কোনো স্বার্থ নিহিত আছে কি না। অথবা আপনাকে পরামর্শ দেওয়ার মতো জ্ঞান বা দক্ষতা তাঁর আছে কি না। আবার রাজনৈতিক, আদর্শিকভাবে পক্ষপাতিত্ব রয়েছে, এমন ব্যক্তির কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রেও সাবধান হওয়া উচিত। এ ছাড়া যে ব্যক্তির মেজাজ ক্ষণে ক্ষণে বদলায়, তাঁর পরামর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।
শহীদুল ইসলাম: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও, ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট