বাণিজ্যযুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির প্রভাব যেন অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনের পিছু ছাড়ছে না। চাহিদা হ্রাসের জেরে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কমছে ব্যবহারিক ধাতুটির। সে ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে টানা তৃতীয় মাসের মতো অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন কমতির দিকে রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন কমেছে ১ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ইস্পাতের বৈশ্বিক বাজার নিয়ে কাজ করছে ডব্লিউএসএ। সংস্থাটি প্রতি মাসে ইস্পাতের উৎপাদন তথ্য প্রকাশ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি ৬৪ দেশের উৎপাদন তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। গত বছর মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৯৯ শতাংশই এসেছে এ দেশগুলো থেকে। সম্প্রতি চলতি বছরের নভেম্বরে ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদন তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত ইস্পাতের উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ টনে। তবে বৈশ্বিক উৎপাদনের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ইস্পাতের শীর্ষ উৎপাদক ও ব্যবহারকারী দেশ চীনে।
বৈশ্বিক ইস্পাতের প্রায় ৫৫ শতাংশ এককভাবে উৎপাদন করা দেশটির এ মাসে উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩ লাখ টনে। টানা কয়েক মাস উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পর গত অক্টোবরে চীনের উৎপাদন কমেছিল। তবে নভেম্বরে উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে দেশটি আবারো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া দূষণসংক্রান্ত জটিলতায় দেশটির কয়েকটি কারখানা ইউনিট বন্ধ থাকার কারণে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। তবে নভেম্বরে চীনের অর্থনীতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। যার প্রভাবেও এ মাসে ইস্পাতের উৎপাদন বেড়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
তবে এ মাসে দেশটি থেকে ইস্পাতের রফতানি কমেছে। এর অর্থ হলো নভেম্বরে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে ইস্পাতের ব্যবহার বেড়েছে। এজন্য রফতানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে চীন।
অন্যদিকে এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত ইস্পাতের উৎপাদন টানা তৃতীয় মাসের মতো কমতির দিকে। গত বছরের তুলনায় এ মাসে দেশটির উৎপাদন ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭২ লাখ টনে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগ সত্ত্বেও নভেম্বরে দেশটির অভ্যন্তরীণ কারখানাগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে ইউএস স্টিল করপোরেশন তাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন করে উৎপাদন কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছে। এছাড়া দাম কম থাকায় ইউরোপের কয়েকটি কারখানা থেকেও আগামী বছর অপরিশোধিত ইস্পাতের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভারতের উৎপাদন কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশটি এ সময় সব মিলিয়ে ৮৯ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করেছে। এছাড়া এশিয়ার মধ্যে জাপানের উৎপাদন ১০ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৭ লাখ টন, দক্ষিণ কোরিয়ার দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৫৯ লাখ টন হয়েছে।
উৎপাদন কমেছে ইউরোপীয় জোটেরও। এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদক দেশ জার্মানিতে নভেম্বরে উৎপাদন কমেছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
এছাড়া ইতালির উৎপাদন ৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ২০ লাখ টন, ফ্রান্সের ১৮ দশমিক ২ শতাংশ কমে ১১ লাখ ও স্পেনের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ টনে। এছাড়া উৎপাদন কমেছে ব্রাজিল, তুরস্ক ও ইউক্রেনেরও। দেশ তিনটির নভেম্বরে অপরিশোধিত ইস্পাতের উৎপাদন যথাক্রমে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ১ ও ২০ দশমিক ১ শতাংশ করে কমেছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস