ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বলছে আগামী বছর জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় বড় ধরণের পতন ঘটবে । প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দৈনিক ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেলে নামবে। যেখানে এ বছর দৈনিক গড় চাহিদা ছিল ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল। চলতি মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আইইএ। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।
প্যারিসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি ধারণা করছে, চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডসে জ্বালানি তেলের চাহিদায় বাংকার অয়েলের (কার্গো ব্যবহূত জ্বালানি) খুচরা বিক্রেতাদের প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছে। আগামী বছর থেকে জাহাজে ব্যবহূত অতিমাত্রায় সালফারসমৃদ্ধ জ্বালানি বিষয়ে নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)। এ কারণে বাংকার অয়েলের খুচরা বিক্রেতারা উচ্চমাত্রার সালফারযুক্ত জ্বালানি তেলের মজুদ খালি করে দিচ্ছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকেই তারা খালি ট্যাংকারে কম মাত্রায় সালফারযুক্ত জ্বালানি তেল ভরতে শুরু করেছেন।
আইইএর গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রোটারডামের বাংকার অয়েল সরবরাহকারীরা বলছেন, তাদের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ
এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে কমেছে সালফারসমৃদ্ধ তেলের চাহিদা ।কারণ ১ জানুয়ারি থেকে আইএমওর নতুন আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ আইন অনুযায়ী, জাহাজে ব্যবহূত জ্বালানি তেলে সালফারের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। যদিও চলতি বছর পর্যন্ত জ্বালানিতে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সালফার ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। একই কারণে সরবরাহও কমিয়ে এনেছে এসব প্রতিষ্ঠান।
এদিকে নতুন এ বিধি সামনে রেখে বার্জে (ছোট আকারের জাহাজ, যেটি থেকে কার্গো জাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়) উচ্চমাত্রায় সালফারযুক্ত জ্বালানি তেলের (এইচএসএফও) সরবরাহ কমিয়ে আনা হচ্ছে। আইএমওর নতুন বিধি সামনে রেখে বার্জে এইচএসএফও তেলে চাহিদা কমে গেলেও কিছু ব্যবসায়ীর উদ্বেগ, আগামী কয়েক মাস হ্রাসকৃত সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশিই থাকতে পারে।
১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া আইএমওর নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী যেসব জাহাজে স্ক্যাবার (দূষণরোধক যন্ত্র) থাকবে না, সেসব জাহাজে দশমিক ৫ শতাংশের বেশি সালফারযুক্ত জ্বালানি ব্যবহার করা যাবে না। এ বিধি সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে কার্গো জাহাজ চলাচলের জন্য ব্যবহূত জ্বালানি ও গ্যাস অয়েলে (এমজিও) সালফার কমিয়ে আনতে জোরেশোরে কাজ করছে পরিশোধন কেন্দ্রগুলো।
বিভিন্ন ধরণের কার্গো জাহাজ চলাচলের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ ব্যারেল জ্বালানির প্রয়োজন হয়। নতুন এ বিধি কার্যকর হলে প্রায় ৫০ হাজার বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের ওপর এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ এসব জাহাজকে আগামী জানুয়ারি থেকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। ফলে নতুন করে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির বড় বাজার তৈরির সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। কারণ আইএমওর এ বিধিনিষেধ সামনে রেখে এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পরিশোধন প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোপেক করপোরেশন, তেল ও গ্যাস কোম্পানি প্রতিষ্ঠান পেট্রো চায়না, দক্ষিণ কোরিয়ার এসকে এনার্জি ও ডাচ শেল কোম্পানির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান কম সালফারযুক্ত জ্বালানি তেল উৎপাদনে জোর দিচ্ছে