চলতি শীতের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহ ও বাতাসে ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে এরই মধ্যে বীজতলার ক্ষতি হয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বীজতলার চারা হলুদ বা সাদা হয়ে যাওয়ায় শঙ্কার মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও বীজতলায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে। তবে অধিদফতরের পরামর্শগুলো মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ বলেন, ‘কুয়াশায় বীতলার ক্ষতির আশঙ্কা প্রতিবছরই থাকে। এ জন্য আমরা দুই সপ্তাহ আগে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পূর্বাভাস নিয়ে করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। কোনো এলাকায় ক্ষতি হচ্ছে কি না, সেদিকে আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।’
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত শীতপ্রবণ অঞ্চলের কৃষকেরা সবসময় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বীজতলা তৈরি করেন। আর কোনো কোনো অঞ্চলের কৃষকেরা বীজতলা পলিথিন দিয়েও ঢেকে দেন। ফলে বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। এছাড়া এখন আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশাতেও যেন বীজতলার ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চন্ডী দাস কুণ্ডু বলেন, ‘ঘন কুয়াশা থাকলে বীজতলা নষ্ট হবে। আমরাও সেই শঙ্কাকে সামনে রেখে কৃষকের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের খোঁজ-খবর রাখছেন। আমরা কৃষকদের বলেছি, প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে বীজতলায় পানি দিতে হবে। বিকেলে সেই পানি ফেলে দিতে হবে। আর চারা যদি হলুদ হয়ে যায়, তাহলে ইউরিয়া ও সালফার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। সকালে চারা থেকে কুয়াশা বা শিশির লাঠি দিয়ে সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি চারাতে ছাই ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। এসব পরামর্শ মানলে বীজতলার ক্ষতি হবে না বলেই আশা করছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এবার ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৬৯ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরির লক্ষ্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ২১ হাজার ৪৮৬ হেক্টর জমির বীজতলা তৈরি হয়েছে। বীজতলা তৈরিতে অগ্রগতির হার ৯৬ শতাংশ। এছাড়া সারাদেশে ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর মৌসুমটিতে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৩ লাখ টন।
এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বীজতলার কিছু ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বাকি এলাকাগুলোতে বীজতলায় কোনো ক্ষতি না হলেও বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। দেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার কৃষক দীজেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘বোরোর বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন আকাশের অবস্থা (কুয়াশা) খুবই ভয়াবহ। এরই মধ্যে কিছু চারার ক্ষতি হয়েছে। এমন কুয়াশা থাকলে চারার আরও বেশি ক্ষতি হবে।’
আরেক কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় আছি। বীজতলা যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। তারপরও যে ক্ষতি হবে না, নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’
বগুড়ার কৃষক ফারুক কামাল জানালেন, এলাকায় বোরোর বীজতলা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু এভাবে কুয়াশা থাকলে বীজতলার ক্ষতি হতে পারে।
ওই এলাকার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিায় উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেল কবীর বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন হয়েছে বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। এখনো অনেকে বীজতলা তৈরি করছে। তবে শীতে এখন পর্যন্ত বীজতলার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।’
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান ‘কুয়াশায় শুধু ধানের ক্ষতি হয় না, আলু-শিম-সরিষারও ক্ষতি হয়। তবে গত দুই-তিন দিনের কুয়াশায় বীজতলার তেমন ক্ষতি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কুয়াশার এ ধারা যদি আরও ১৫ দিন চলতে থাকে, তাহলে ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এই কৃষিবিদ বলেন, ‘বীজতলায় যেন হঠাৎ সূর্যের আলো না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সে জন্য চারা থেকে সকালে লাঠি বা রশি দিয়ে শিশির সরিয়ে ফেলতে হবে। বীজতলায় সেচ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।’