শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
মাশরাফি কিন্তু অলরাউন্ডার!
প্রকাশিত - নভেম্বর ২৪, ২০১৫ ৮:৩২ পিএম
জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগের কথা। একাডেমি মাঠে অনুশীলনে এসেছেন মাশরাফি। ততদিনে লটারিতে নির্ধারিত হয়ে গেছে আইকন ক্রিকেটাররা কে কোন দলে। মাশরাফির ঠিকানা হয়েছে কুমিল্লায়। লটারির দুই দিন পর ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক নাফিজা কামাল এক সাক্ষাৎকারে দল নিয়ে কথা বলতে যেয়ে তালগোল পাকিয়ে মাশরাফি সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘অলরাউন্ডার’ ব্যাপারটি। তিনি বলতে চান মাশরাফির যায়গায় অলরাউন্ডার সাকিবকে পেলে ভাল হতো। একাডেমি মাঠের সেদিনের অনুশীলনে সাংবাদিকরা মাশরাফির সামনে এ বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। কিন্তু যাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, সেই তিনি চুপ।
এক সময় নীরবতা ভেঙে মাশরাফিও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি নাফিজা কামালের কথায় একমত পোষণ করেন, ‘উনি তো ঠিকই বলেছেন। যদি ওরকম প্লান থাকে তবে সাকিবকে না পাওয়া গেলে তো রিয়াদ অথবা নাসিরকে পেলে ভাল হতো। আমি হলে সেটাই চাইতাম।’
মাশরাফি এই কথা বললেও মুখ দেখে ঠিকই বোঝা যাচ্ছিল, বিষয়টি নিয়ে তার ভেতর এক প্রকার জেদ কাজ করছে। এরপর আবার শোনা গেল, ওই দিন রাতে নাফিজা কামাল মাশরাফিকে দুই বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু ফোন তোলেননি অধিনায়ক।
মাশরাফির পাশ থেকে কয়েকজন সাংবাদিক নাফিজা কামালের সমালোচনাও করছিলেন, ‘মালিক হয়ে দলের স্ট্রাটেজি সম্পর্কে এভাবে গণমাধ্যমে কথা বলা তার ঠিক হয়নি। আর বললেও এত কথা কেন বলতে হবে।’
এরপর বিপিএল শুরু হল। প্রথম ম্যাচ থেকেই মাশরাফি একটা বার্তা দিলেন, ‘আমি কিন্তু অলরাউন্ডার।’ প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার স্কোর ৮০-ও পেরোবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। এই অবস্থায় মাশরাফির ইনিংস সর্বোচ্চ ২৫ রান সম্ভ্রম বাঁচায়। আটে নামা মাশরাফি আর নয়ে নামা সান্টোকির ২১-এর বদৌলতেই ৮ উইকেটে ১১০ রানের পুঁজি পায় কুমিল্লা।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাশরাফি আরো ‘জেদি’। চিটাগাংয়ের বিপক্ষে ১৭৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দলের স্কোর যখন ৫৪/৩, তখন ব্যাট-প্যাড পরে নেমে পড়েন। শুধু নেমেই ক্ষান্ত দেননি। রীতিমতো নিয়মিত ব্যাটসম্যানের মতো স্ট্রোকের ফোয়ারা সাজান। দুইবার জীবন পেলেও এক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়নি তিনি শুধু পেসার।
১৬তম ওভারের চতুর্থ বলে যেভাবে তাসকিনকে আপার-কাট খেলে থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারি মারেন, তা অনেক নামি ব্যাটসম্যানের কাছে ঈর্ষার কারণ হতে পরে। তার আগের বলেও স্ট্রেট ড্রাইভে চার মারেন। ৩০ বলে পৌঁছে যান অর্ধশতকে।
অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর আরো দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন নড়াইল এক্সপ্রেস। বিপজ্জনক পেসার মোহাম্মদ আমিরকে দেখেশুনে খেলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। অপরাজিত থাকেন ৫৬ রানে। জয়সূচক রানটা নিয়েই ব্যাট ফেলে দিয়ে ছুটে যান সাইড লাইটে। সতীর্থরা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন। কেউ নিজহাতে প্যাড, গ্লাভস খুলে দেন। মাশরাফি বিজয়ী উল্লাসের ভিড়ে কী যেন ভাবেন। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের দিকে হেঁটে যান। করমর্দন করেন।
স্টেডিয়াম জুড়ে ধ্বনিত হয় একটাই নাম-মাশরাফি, মাশরাফি, মাশরাফি। সেই ধ্বনির আড়ালে আরেকটা শব্দ মুচকি হাসে-অলরাউন্ডার!
সানবিডি/ঢাকা/রাআ
Copyright © 2024 Sunbd24 - Latest News Update About DSE, CSE Stock market.. All rights reserved.