বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বৈধ পথে গমনকারি কর্মীদের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে উড়োজাহাজ ভাড়ায় বিশেষ ছাড় চায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তাদের জন্য বিশেষ হ্রাসকৃত ভাড়া নির্ধারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে অনুরোধ জানিয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত ৩১ ডিসেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেনকে একটি চিঠি পাঠান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী, যার অনুলিপি পাঠানো হয় বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছেও।
পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গন্তব্য দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের বিমান ভাড়া বেড়েছে বলে জানা যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৈধভাবে বিদেশগামী অসচ্ছল কর্মীদের বিমান ভাড়ায়, বিশেষ করে গন্তব্য দেশে যাওয়ার পথে বিশেষ ছাড় দেয়া হলে তা একদিকে যেমন একজন কর্মীর অভিবাসন ব্যয় লাঘব করবে, অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করবে। কারণ অভিবাসনের জন্য একজন বিদেশগামী কর্মীকে যে ব্যয় বহন করতে হয়, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে বিমান ভাড়া। অন্যদিকে বাংলাদেশের যেসব কর্মী কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যান, তাদের প্রায় সবাই অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। এছাড়া রেমিট্যান্স উপার্জনকারী কর্মীদের সাশ্রয়ী ব্যয়ে বিদেশ গমনসহ তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
তবে এ ভাড়া কেবল জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কর্তৃক ইস্যুকৃত স্মার্টকার্ডধারী বিদেশগামী কর্মীদের দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিদেশগামী কর্মীর অভিবাসন ব্যয় কমার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, বর্তমানে বিমানের বহরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ১৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে। নিউইয়র্কসহ কয়েকটি নতুন রুটে ফ্লাইট শুরুর বিষয়ে কাজ করছে বিমান। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলোয় অনেক বড় বাজার রয়েছে বিমানের, যার উল্লেখযোগ্য অংশ প্রবাসী কর্মী। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলোতে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো হচ্ছে। আশা করছি ফ্লাইট বাড়ালে পর্যাপ্ত যাত্রী পাবে বিমান। বিমানের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটলে ১০ শতাংশ ছাড় পাবে সবাই। রেমিট্যান্স উপার্জনকারী প্রবাসী কর্মীদের সেবার বিষয়ে সচেষ্ট বিমান।
বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, বিএমইটি থেকে স্মার্টকার্ড নিয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬ লাখ ৪ হাজার ৬০ বাংলাদেশী কর্মী বিদেশে গেছেন এবং এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ কর্মী বিদেশে গিয়েছেন এবং সে সময়ে ১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির প্রায় ৬৫ শতাংশই যায় উপসাগরীয় এবং অন্য আরব দেশগুলোতে। বাকি ৩৫ শতাংশের বেশির ভাগই যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী যান সৌদি আরবে। এরপর মালয়েশিয়া, কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুরে। এর সব গন্তব্যেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট রয়েছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবারের মতো ২০১৯ সালেও সবচেয়ে বেশি কর্মী সৌদি আরবে গিয়েছেন। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ২৪ জন কর্মী গিয়েছেন, যা ওই সময়ের মোট প্রেরিত কর্মীর প্রায় ৬০ শতাংশ। শ্রম গ্রহণকারী দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওমান (১১.৬৮%), সেখানে গিয়েছেন ৬৭ হাজার ১৭৭ কর্মী। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে যথাক্রমে কাতার (৮.০৭%) ও সিঙ্গাপুর (৭.৫৮%)।
বিমানের শীতকালীন সূচি অনুযায়ী, বর্তমানে রিজিওনাল রুটে কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, কলকাতা, দিল্লি, কাঠমান্ডু ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট রয়েছে বিমানের। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে দোহা, দুবাই, কুয়েত, দাম্মাম, জেদ্দা, রিয়াদ, মদিনা ও মাস্কাটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এছাড়া লম্বা দূরত্বের মধ্যে লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট রয়েছে বিমানের। সূত্র-বণিক বার্তা