ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠকের চব্বিশ ঘণ্টা পার না হতেই ফের বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। একশ’ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরের দেশি পেঁয়াজ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ীদের অজুহাত, কৃষকরা বেশি দামের আশায় মাঠ থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ তুলে ফেলায় দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কম, তাই দাম বেড়েছে। রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দেশের আমদানিকারকসহ উৎপাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই বৈঠকে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক মুনাফার পরামর্শ দিয়ে আসন্ন রমজান মাসের চাহিদা মেটাতে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, আদা, রসুন, খেজুর ও পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় মজুত সৃষ্টির কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
ব্যবসায়ীদের তিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দিয়ে ন্যায়সঙ্গত মুনাফা করে ব্যবসা করার কথা বলেছিলেন। এক্ষেত্রে সরকার ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রীর এই আহ্বানের পরের দিন শুধু পেঁয়াজই নয়, বাজারে দাম বেড়েছে আদা, রসুন, ভোজ্যতেল ও চিনিসহ সব ধরনের শাকসবজির।
শীতের মৌসুমে বিভিন্ন সবজিতে বাজার ভরপুর হলেও দাম এখনও সহনীয় হয়ে ওঠেনি। নতুন আলুর কেজি এখনও ৪০ টাকা। শিমের কেজি ৬০ টাকা। গাজর ও মুলার কেজি ৬০ টাকা, টমেটোর কেজি ৮০ টাকা। পাশাপাশি বেড়েছে আদার দাম। প্রতিকেজি আদার দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে দেশি ১৩০ টাকা এবং চায়না ১৬০ টাকা।
ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা। চিনি এতদিন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার তা ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ভোজতেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিত সাহা জানিয়েছেন, শীতের সময় জমে যায় বলে পামতেলের ব্যবহার ও বিক্রি কমে যায়। চাপ পড়ে সয়াবিনের ওপর। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে সয়াবিনের দাম। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশি বাজারেও কমবে বলে জানান তিনি।
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক হাজী মাজেদ জানিয়েছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। বৃষ্টির কারণে গত দুদিন কৃষক মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারেননি। অপরদিকে পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হওয়ায় আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে, লোকসানের ভয়ে অনেকেই এখন আর পেঁয়াজ আমদানি করছে না। তাই সরবরাহ কমে গিয়ে চাহিদা ও দাম বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, রমজানকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি আমদানির এলসি খুলতে হবে। যাতে রোজার আগেই প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর ভালো মজুত গড়ে তোলা হয়। কারণ, কেউ লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস