মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ প্রবাসীদের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ শেষ হওয়ার পর ১ জানুয়ারি থেকেই দেশজুড়ে অভিযান শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। বছরের প্রথম তিনদিনের অভিযানে ৯২ জন অবৈধ বাংলাদেশীকে আটক করেছে মালয়েশিয়া পুলিশ। আটককৃতদের রাখা হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ ১ থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১২৫টি অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে মোট ২ হাজার ৪৫ জনকে আটক করে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর মধ্যে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ২৪৫ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশী রয়েছেন ৯২ জন, বাকিরা অন্যান্য দেশের।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যেসব অবৈধ কর্মী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেননি, তাদের আটক করা হবে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন আটক কর্মীদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছে। আটক কর্মীদের কোথায় রাখা হয়েছে, এ বিষয়ে হাইকমিশন এখনো কিছু জানে না।
এদিকে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান খায়রুল দাজাইমি দাউদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১ আগস্ট থেকে সরকারের দেয়া সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭১ জন দেশে ফিরে গেছেন।
এর আগে ২৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানালেও তা আমলে নেয়নি দেশটির সরকার। পরবর্তী সময়ে গত ২৭ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তান সেরি মহিউদ্দিন ইয়াছিন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, অবৈধ অভিবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ দেয়ার কারণেই অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকার আর কোনো সুযোগ দিতে চায় না।
এদিকে পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচটি রূপরেখার মাধ্যমে বছরে ৭০ হাজার অবৈধ শ্রমিক বা অভিবাসীকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, পাঁচটি রূপরেখার ভিত্তিতে দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান পরিচালিত হবে। আর সেই অভিযানে যারা গ্রেফতার হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সরকার।
অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে মালয়েশিয়া সরকারের নেয়া নতুন পাঁচ কৌশল হচ্ছে—এক. প্রয়োগকৃত অভিযান পদ্ধতি, যা দেশব্যাপী অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। দুই. আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নীতি, যা নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগের নীতিগুলোর সমন্বয় সম্পর্কিত বাস্তবায়ন। তিন. প্রবেশপথ ও বর্ডার নিয়ন্ত্রণ কৌশল, যা দেশের সীমানা এবং প্রবেশপথগুলোর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ। চার. বিদেশী নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিগুলোর সমন্বয়। পাঁচ. মিডিয়া এবং প্রচার কৌশল, যা অবৈধদের বিষয়ে মিডিয়া কাভারেজ, প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট থেকে ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি চালু করে মালয়েশিয়ার সরকার। এ কর্মসূচির আওতায় সুযোগ নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭১ কর্মী দেশে ফিরে গেছেন। এর পরও বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীও দেশে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে টানা অভিযান পরিচালনা করবে অভিবাসন বিভাগ। এর আগে ২০১৭ সালে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল মালয়েশিয়ার সরকার। ওই সময় বৈধ হতে আবেদন করেছিলেন প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক। তবে শেষ পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ পান ২ লাখ ৮০ হাজার ১১০ জন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে কোনো বাংলাদেশী কর্মীকে ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে এর আগে ভিসা পাওয়া কর্মীরা সেপ্টেম্বরের পরও মালয়েশিয়া গেছেন। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন।