আবারো ২ শতাংশ বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০১-০৭ ০৯:১৩:০৯


ইরানি প্রভাবশালী জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে মার্কিন বাহিনী কর্তৃক হত্যার পর দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।এ  উত্তেজনার প্রভাবে  জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরাকের বিরুদ্ধে অবরোধ ও ইরানের বিরুদ্ধে আরো হামলার হুমকি দেয়ার পর গতকাল জ্বালানি তেলের দাম ২ শতাংশ বেড়েছে। খবর রয়টার্স।

ইরাকের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইরানের কমান্ডার জেনারেলকে হত্যার অভিযোগে রোববার নিজ দেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানায় দেশটি। এ ঘোষণার পরপরই তেলসমৃদ্ধ দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এছাড়া ইরানের পক্ষ থেকে সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণায় দেশটির ওপর পাল্টা আরো হামলার আগাম হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। এ ঘোষণার পরই জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করে।

গতকাল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা গত সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। ওই সময় সৌদি আরামকোর দুটি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭২ ডলারে পৌঁছায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক ও ইরানের ওপর পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়ার পরপরই দিনের মধ্যভাগে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৭০ ডলার ২৭ সেন্টে পৌঁছায়, যা শুক্রবারের হামলার পর স্থির হওয়া বাজারের চেয়ে ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ৬৭ সেন্ট বা ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ৩৪ সেন্ট বা ২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৪ ডলার ৩৯ সেন্টে পৌঁছায়। এর আগে হামলার পর ডব্লিউটিআইয়ের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৪ ডলার ৪৪ সেন্ট পর্যন্ত উঠে আসে। গত এপ্রিলের পর যা সর্বোচ্চ।

গত শুক্রবার বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন ইরানের সর্বোচ্চ কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। এ হত্যার পর পরই জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে। যার বড় প্রভাব পড়তে শুরু করে জ্বালানিটির ওপর। কারণ বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ হয় এ অঞ্চল থেকে।

জ্বালানি তেলের রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্তোলক দেশ ইরাক। গত শুক্রবার দেশটির রাজধানী থেকে বিমান হামলা করে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। এরপর রোববার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করে নিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানায় ইরাকের পার্লামেন্ট। এ আহ্বানের পরই ইরাকের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন ট্রাম্প। ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিতে ইরাক ওয়াশিংটনের প্রতি চাপ দিলে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। একই সঙ্গে সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিলে ইরানকে কড়া জবাব দেয়া হবে বলেও জানান ট্রাম্প।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে গবেষণাকারী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক আয়হাম কামাল মনে করেন, সাম্প্রতিক এ ঘটনা আঞ্চলিক উত্তেজনাকে দীর্ঘায়ু করবে এবং এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রেরও কম ক্ষতি হবে না। এছাড়া এ উত্তেজনার প্রভাব পড়বে মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর। যদিও শেষ পর্যন্ত এটি কোনো যুদ্ধ ডেকে আনবে না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এ সব ঘটনা এ অঞ্চলের মধ্যে নিশ্চিত উত্তেজনা তৈরি করবে। ইরান হয়তো উপসাগরীয় জ্বালানিকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। এছাড়া ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নৌ-পর্যায়ে সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়াতে পারে। পক্ষান্তরে যা জ্বালানি অবকাঠামোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। আর সেটি হলে চলতি বছরে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ থেকে ৭৫ ডলারে মধ্যে থাকতে পারে বলে মনে করে নিউইয়র্কভিত্তিক এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।