যে সকল প্রবাসী সৌদিআরবে অবৈধভাবে অবস্থান করছে তাদেরকে দেশে ফেরার বিশেষ সুযোগ দিয়েছে সৌদি আরব। দেশটিতে অবস্থানরত মেয়াদোত্তীর্ণ ইকামাধারীরা ‘স্পেশাল এক্সিট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক এ কর্মসূচির আওতায় জেল-জরিমানা ছাড়াই নিজ দেশে ফিরতে পারবেন । তবে শুধু বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরতরাই এ সুবিধা পাবেন। হুরুব (কর্মস্থল থেকে পলাতক) ঘোষিত যেসব শ্রমিকের নামে এখনো কোনো মামলা হয়নি, তাদেরও এ কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরতে দেবে সৌদি সরকার। গত ২২ ডিসেম্বর রিয়াদের এ বিশেষ কর্মসূচি শুরু হয়।
বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিনা মূল্যে এ বিশেষ প্রত্যাবাসন সুবিধা দিচ্ছে রিয়াদ লেবার অফিস। এ প্রসঙ্গে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং সূত্রে জানা গেছে, মূলত রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়া ও কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া কর্মীরা (মামলাবিহীন) এ বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন।
সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং কাউন্সেলর মেহেদী হাসান জানান, অবৈধ প্রবাসীদের জেল-জরিমানা ছাড়া দেশে ফেরাতে বিশেষ প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। এ প্রোগ্রামের আওতায় সৌদি আরবে কর্মরত সব বাংলাদেশী পড়বে না। সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশীদের মধ্যে যাদের ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কোম্পানি কোনো কারণে ইকামা নবায়ন করছে না; মূলত তারা এ প্রোগ্রামের আওতায় পড়বেন। একই সঙ্গে যেসব বাংলাদেশী হুরুব অর্থাৎ পলাতক ঘোষিত হয়েছেন; কফিল মারফত তারা এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন।
বেশ কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে এ সুবিধা দিচ্ছে সৌদি সরকার। এর মধ্যে আমেল মানযিলি (গৃহকর্মী) বা সায়েক খাস (নিয়োগকর্তার ব্যক্তিগত চালক) এ কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হবেন না। অন্যদিকে যেসব কর্মীর ইকামা হয়নি বা মেয়াদোত্তীর্ণ, হুরুব মামলা নেই, যার কোনো বকেয়া ভাতার দাবি নেই এবং এক্সিট ভিসা পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে দেশে ফিরতে সক্ষম; মূলত তারাই এ কার্যক্রমের আওতায় পড়বেন। এছাড়া কর্মীর নামে কোনো গাড়ি থাকা যাবে না এবং ট্রাফিক জরিমানা থাকলে তা আবেদনের আগেই পরিশোধ করতে হবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সুবিধা পেতে দেশটির শ্রম কার্যালয় থেকে বিশেষ একটি আবেদন ফরম নিতে হবে, এটি যথাযথভাবে পূরণ এবং বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে সত্যায়িত করে স্থানীয় সৌদি শ্রম কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আবেদনকারীকে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে অবহিত করবে।
এদিকে গত ২৯ ডিসেম্বর রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ জানুয়ারি থেকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইক্সপাট্রিয়েট ডিজিটাল সেন্টার (ইডিসি) থেকে বিশেষ প্রত্যাবাসন সেবা নিতে হবে। এরপর প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমালোচনার মুখে গত ৩১ ডিসেম্বর নতুন আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দূতাবাস। সেখানে বলা হয়, নির্ধারিত ফি দিয়ে ইডিসি থেকে নয়, বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রিয়াদ লেবার অফিস বিনা মূল্যে এ সেবা দেবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের পাসপোর্ট এবং ইকামাসহ (ইকামা না থাকলে পাসপোর্টে ভিসার পাতার হুদুদ নাম্বার) দুই সেট কপি নিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে শুক্র ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রওদা এলাকায় অবস্থিত রিয়াদ লেবার অফিসে যোগাযোগ করে সেবা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত পাঁচ বছরে ৯৪ হাজার ১২৮ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে আউটপাস দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে জেদ্দার বাংলাদেশী কনস্যুলেট জেনারেল। এর মধ্যে গত বছরের প্রথম দশ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) আউটপাস ইস্যু হয়েছে ১৮ হাজার ২২০ জনের। এ সংখ্যা ২০১৮ সালে ছিল ২৬ হাজার ৭৭১, ২০১৭ সালে ১২ হাজার ৪৯৬, ২০১৬ সালে ১৪ হাজার ৫৯৩ ও ২০১৫ সালে ২২ হাজার ৪৮।সূত্র-বণিক বার্তা
সানবিডি/ঢাকা/এনজে