মধ্যপ্রাচ্য অস্থিরতায় স্বর্ণ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০১-০৯ ০৯:৩২:২৭


ইরান-আমেরিকার চলমান যুদ্ধাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে। হুমকি ও পাল্টা হামলায় এ অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে, বাণিজ্যে। সর্বশেষ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। এ হামলার পর পরই আবার চাঙ্গা হওয়া শুরু করেছে স্বর্ণ ও জ্বালানি তেলের বাজার। খবর রয়টার্স।

সম্প্রতি বাগদাদের বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। এর পরই চাঙ্গা হওয়া শুরু করে স্বর্ণ ও জ্বালানি তেলের বাজার। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভোরে এ হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এর পরই আবারো চাঙ্গা হওয়া শুরু করে বাজার। এর মধ্যে গতকাল স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ শতাংশ বেড়েছে।

নতুন করে সৃষ্ট এ উত্তেজনায় গতকাল দিনের শুরুতেই স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এদিন স্বর্ণের স্পটমূল্য ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৬০৩ ডলার ২১ সেন্টে। এর আগে দিনের শুরুতে মূল্যবান ধাতুটির দাম ১ হাজার ৬১০ ডলার ৯০ সেন্ট পর্যন্ত ওঠে, যা ২০১৩ সালের মার্চের পর সর্বোচ্চ। এছাড়া ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে স্বর্ণের দাম ২ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০৫ ডলার ৮০ সেন্টে স্থির হয়।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় সেফ হ্যাভেন বা আপত্কালীন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ বিক্রি বেড়ে যায়। যে কারণে গত শুক্রবার ইরানের শীর্ষ জেনারেল হত্যাকাণ্ডের পর ধাতুটির বাজার চাঙ্গা হওয়া শুরু করেছে।

অন্যদিকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার জেরে স্বর্ণের পাশাপাশি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের বাজারও। গতকাল ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ৫৬ সেন্ট বা ২ দশমিক ৩ সেন্ট বেড়েছে। এদিন প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট বিক্রি হয়েছে ৬৯ ডলার ৮৩ সেন্টে। যদিও হামলার জেরে এরই মধ্যে জ্বালানিটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৭১ ডলার ৭৫ সেন্ট পর্যন্ত উঠেছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ২৫ সেন্ট বা ২ শতাংশ বেড়েছে। এদিন ডব্লিউটিআই ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়ায় ৬৩ ডলার ৯৫ সেন্টে। এর আগে ডব্লিউটিআইয়ের দাম সর্বোচ্চ ৬৫ ডলার ৮৫ সেন্ট পর্যন্ত উঠে আসে, যা গত বছরের এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।

টোকিওর সানওয়ার্ড ট্রেডিংয়ের বিশ্লেষক হিদেসি মাতসোনাগা মনে করেন, বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য সংকট খুবই খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। তবে এর মধ্যে জ্বালানি তেলের বাজারে কিছুটা অর্জন এসেছে, অর্থাৎ বাজার চাঙ্গা হয়েছে। এ উত্তেজনার জের ধরেই ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি অ্যারামকোর দুটি স্থাপনায় হামলার পর সর্বোচ্চ। এ সময়ও জ্বালানিটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে অ্যারামকো দ্রুত উত্তোলন সক্ষমতায় ফেরার পর দাম আবার পড়ে যায়।

এদিকে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যেও জ্বালানি তেলের দাম কমে আসতে পারে বলে মনে করেন হিদেসি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এসব হামলায় কতটা ক্ষতি হয়, সেটা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যদি এ উত্তেজনার মধ্যেও জ্বালানি তেলের কোনো স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা না হয়, তাহলে গত সেপ্টেম্বরের মতো জ্বালানি তেলের দাম কমে আসবে।