৫ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০২০-০১-১১ ০৯:০৮:৩০


বিদায়ী ২০১৯ বছরের ডিসেম্বরে বৈশ্বিক বাজারে  ভোজ্যতেল, দুগ্ধপণ্য ও চিনির দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। এর প্রভাব পড়েছে খাদ্যপণ্যের সামগ্রিক দামে। এর মধ্য দিয়ে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক পর পর তিন মাস ধরে বাড়তির দিকে। একই সঙ্গে গত ডিসেম্বরে এ মূল্যসূচক বেড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। এ কারণে ডিসেম্বরজুড়ে বিশ্ববাসীকে বাড়তি দামে খাবার কিনতে হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসভিত্তিক ফুড প্রাইস ইনডেক্সে (এফএফপিআই) এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর এফএও।

এফএওর দেয়া  তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৮১ দশমিক ৭ পয়েন্ট, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট বেশি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই খাদ্যপণ্যের সর্বোচ্চ বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বিদায়ী বছরের শেষ প্রান্তিকজুড়ে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এ সূচকে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১৭১ দশমিক ৫ পয়েন্ট। গত ডিসেম্বরে বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেল, খাদ্যশস্য, চিনি ও দুগ্ধপণ্যের দাম বেড়েছে।

বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৬৪ দশমিক ৭ পয়েন্ট, যা আগের মাসের তুলনায় ১৪ দশমিক ১ পয়েন্ট বা ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেলের দাম গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে। মূলত বাড়তি চাহিদার কারণে টানা পাঁচ মাস পাম অয়েলের আন্তর্জাতিক বাজার চাঙ্গা রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সূচকে। এ সময় সয়াবিন, সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের দামও বাড়তির দিকে ছিল।

গত ডিসেম্বরে বিশ্বজুড়ে বাড়তির দিকে ছিল খাদ্যশস্যের দামও। এ সময় খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৬৪ দশমিক ৩ পয়েন্ট। আগের মাসের তুলনায় এ সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময় চীনের বাজারে বাড়তি চাহিদার জের ধরে গমের দাম চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। উৎপাদন শ্লথতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে ভুট্টার দাম। অন্যদিকে প্রাকৃতিক কারণে ভারতীয় উপমহাদেশ ও আশপাশের দেশগুলোয় ধান-চাল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চালের বাজারও চাঙ্গা হয়েছে।

দুগ্ধপণ্যের বাজার গত ডিসেম্বরে আরো অস্থির হয়ে ওঠে। এ সময় দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড়মূল্য সূচক দাঁড়িয়েছে ১৯৮ দশমিক ৯ পয়েন্ট, যা আগের মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে পনিরের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। টানা তিন মাস দরপতনের পর চাহিদা বৃদ্ধির জের ধরে এ সময় দুগ্ধপণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। তবে বিশ্বজুড়ে চাহিদায় শ্লথতায় গত ডিসেম্বরে মাখন ও ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম খুব একটা বাড়েনি।

বিদায়ী বছরের শেষ মাসে চিনির বাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। এ সময় খাদ্যপণ্যটির বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৯০ দশমিক ৩ পয়েন্ট। এক মাসের ব্যবধানে এ সূচক ৮ দশমিক ৭ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে টানা তিন মাস চিনির দাম বাড়তির দিকে বলে জানিয়েছে এফএও। ব্রাজিলে চিনির পরিবর্তে ইথানল উৎপাদনে আখের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে আগামী দিনগুলোয় ভারতে আখ ও চিনির উৎপাদন বাড়লে দাম কমে আসতে পারে।

এদিকে গত ডিসেম্বরে আমিষপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৯১ দশমিক ৬ পয়েন্ট, যা আগের মাসের সমান। তবে ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় গত ডিসেম্বরে এ সূচক ১৮ শতাংশ বাড়তি ছিল বলে জানিয়েছে এফএও।

সানবিডি/এনজে