জন্ম-ভুমির মায়া ত্যাগ করে মঙ্গলবার ২য় দফায় ভারতে গেলেন কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহলের ৩০ পরিবারের আরও ১৫৮ জন বাসিন্দা। এর মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলার ১৫৭ জন ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার একজন আছেন। দুপুর ১ থেকে ২টা পর্যন্ত ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাগভান্ডার সীমান্তের অস্থায়ী চেক পয়েন্ট দিয়ে ভারতের কোচবিহার জেলা প্রশাসনের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
এসব পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ ছিটমহল থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সকাল ১০টায় ৫টি বাস ও ২৩টি পিকআপ ভ্যানে করে বাগভান্ডার অস্থায়ী চেক পয়েন্টে পৌছান। পরে বাগভান্ডার চেক পয়েন্টে দুই দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের ট্রাভেলপাশ পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার পর হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের বিদায় জানান ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন মাহমুদ ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন ভুইয়া। ভারতের পক্ষে তাদের স্বাগত জানিয়ে বরন করেন ভারতের কোচবিহারের ১০১ বিএসএফ কমান্ডার আখতার হোসেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের সদস্য সচিব অভিজিত মিত্র।
ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে অনেকে খুশি হলেও জন্মভুমি, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশির মায়া ত্যাগ করে নতুন ঠিকানায় যাওয়ার মুহুর্তে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা কাচু চন্দ্র বর্মন (৪৪) জানান, আমার পরিবারের ২২ জন সদস্যকে নিয়ে ভারত যাচ্ছি। আমরা ভারতের নাগরিক ছিলাম তাই ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে ভারতে যাচ্ছি।
একই ছিটমহলের নাগরিক অনিতা রানী জানান, আমি এখানে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলাম। এখন বাবা-মা, ভাইয়ের সাথে ভারতে যাচ্ছি। জানি না ভারতে আমার সার্টিফিকেটের মূল্যায়ন করা হবে কিনা। আমি আশা করছি ভারত সরকার আমার বিষয়টি দেখবেন যাতে করে আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন মাহমুদ জানান, কুড়িগ্রামের ভেতরের বিলুপ্ত ছিটমহলের ৩০৫ জন বাসিন্দা প্রথম অবস্থায় ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত দুই দফায় ভারতে গেলেন ২৩০ জন বাসিন্দা। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১৯ নভেম্বর ভারতে যান ৭২ জন। বাকী ৭৫ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭০ জন না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করে। ৪ জন এখন পর্যন্ত প্রশাসনের নিকট কাগজপত্র জমা দেননি। তবে বাকীরা চাইলে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে যেতে পারবেন।
এদিকে ভারতীয় হাইকমিশন রাজশাহীর সদস্য সচিব অভিজিত মিত্র জানান, ভারতের নাগরিকত্ব নেয়া সাবেক ছিটের বাসিন্দারা কুড়িগ্রাম থেকে দুই দফায় ২৩০ জন ভারতে গেছেন। ভারতের যাওয়া বাসিন্দাদের কোচবিহার জেলার দিনহাটায় তাদের নিবাসসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।