দেশে অভ্যন্তরীণ নদীপথে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে আগ্রহী হচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। গত বছর এ পথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চলে আমদানি-রফতানি করা পণ্য পরিবহন বেড়েছে ২২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার অদূরে পানগাঁও রুটে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ রুট ব্যবহার করে কনটেইনার পরিবহন শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া বছরে। ২০১৯ সালে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে নৌপথে মোট ২৭ হাজার ৪৭৭ একক কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫০৮ একক। অর্থাৎ গত বছর বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২২ শতাংশ। এর আগের বছর ২০১৭ সালে হ্যান্ডলিং হয় ২৫ হাজার ৭১৯ একক কনটেইনার।
বন্দরের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ নদীপথে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয় ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর। যদিও দীর্ঘ সময় কনটেইনার পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো নেয়া উদ্যোগটি ব্যবসায়ীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। ফলে উদ্যোগটির সাফল্য নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। নৌপথে সেবাটি চালু হওয়ার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে পানগাঁওগামী আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার নামানো হয় ৩২৯ একক। তবে রফতানির কোনো কনটেইনার পরিবহন হয়নি সে বছর। এরপর ২০১৫ সালে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে মোট ১ হাজার ২৪৯ একক এবং ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৬০৮ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবসায়ীদের নৌপথে পণ্য পরিবহনে আগ্রহী করতে নেয়া বেশকিছু উদ্যোগের সুফল মিলেছে। চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও রুটে ট্যারিফ কমানো হয়েছে। এ রুটের জাহাজকে দ্রুত বার্থিং দিয়ে লোডিং-আনলোডিং অপারেশন দ্রুত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এনসিটিতে (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) একই সময়ে দুটি জাহাজ বার্থ দেয়া হচ্ছে এবং একটি জাহাজ মোবাইল হারবার ক্রেন দিয়ে ও অন্যটি কি-গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া বার্থিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এ রুটে প্রথম দিকে তিনটি জাহাজ চলাচল করত। বর্তমানে এ রুটে মোট ১৩টি জাহাজ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যেখানে নিয়মিত চলাচল করছে আটটি জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মোহাম্মদ জাফর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, নৌপথে কনটেইনার পরিবহনে ট্যারিফ কমানো হয়েছে। আবার বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক আইসিটি নির্মাণ ও জাহাজ নামানোর ফলে ভালো ফল এসেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে পরিমাণ কনটেইনারবাহী পণ্য পরিবহন হচ্ছে, তা অনেক বড় পরিসরে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০১৯ সালে মোট ৩০ লাখ ৮৮ হাজার একক কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে। এর ৭০ শতাংশের বেশি ঢাকা ও তার আশপাশের অঞ্চলে গেছে সড়কপথ ব্যবহার করে, যার খুবই ছোট অংশ নদীপথে পরিবহন হয়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারী ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রতি বছর আমদানি বাড়ছে। কম সময়ে ও নিরাপদে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত হলে নৌপথে পণ্য পরিবহন দিনে দিনে বাড়তে থাকবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। নৌপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম, পরিবেশবান্ধব, জ্বালানিসাশ্রয়ী ও ঝুঁকি কম। নৌপথে আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা সহজ হলে সড়কপথে যানজটের চাপ কমাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
সরকারি উদ্যোগে ঢাকার অদূরে পানগাঁওয়ে প্রায় ৩২ একর জায়গার ওপর ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) গড়ে তোলা হয়েছে। পানগাঁও টার্মিনালে বছরে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার একক (প্রতিটি ২০ ফিট দৈর্ঘ্যের) কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি এখন এগিয়ে আসছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারাও। পানগাঁওয়ের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে জাহাজ ও আইসিটি নির্মাণের ফলে নৌপথে পণ্য পরিবহন আরো বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মো. আব্দুস সালাম বলেন, নদীপথে সময় ও ভাড়া যৌক্তিকভাবে রাখলে খুব দ্রুতই সাফল্য আসবে। পর্যাপ্ত কনটেইনার জাহাজের ব্যবস্থা রাখতে হবে। হরতাল-অবরোধ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে এবং সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প পথ হিসেবে নৌপথের জুড়ি নেই। নদীগুলো যাতে সারা বছর সচল (নাব্য) রাখা যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
কনটেইনার পরিবহনে প্রবৃদ্ধি ঘটলে তাতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয় বলে মনে করা হয়। কারণ কনটেইনারে আমদানি-রফতানি পণ্যের বেশির ভাগই শিল্পের কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্য। সূত্র: বণিক বার্তা
সানবিডি/ঢাকা/এসএস