প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনদিনের সফরে গতকাল রবিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাজধানী আবুধাবি গেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি উড়োজাহাজ গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার আবুধাবিতে ‘আবুধাবি সাসটেইনেবল উইক’, ‘জায়েদ সাসটেইনেবল অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি’ ছাড়াও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে অংশ নেবেন। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি।
ইউএইয়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মকতুম, আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান এবং ইউএই জাতির মাতা শেখা ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সঙ্গে আগামীকাল মঙ্গলবার বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইউএইয়ের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে দুটি দলিল সই হতে পারে। সেগুলো হলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কম্পানির মধ্যে এমওইউয়ের সংযুক্তি; আর ঢাকার বারিধারায় কূটনৈতিক এলাকায় ইউএইয়ের দূতাবাস নির্মাণে জমি বরাদ্দ বিষয়ে চুক্তির প্রটোকল। সফর শেষে আগামীকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে অবস্থিত দেশ বাহরাইন, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও ইউএইয়ের রাষ্ট্রদূতরা আজ আবুধাবিতে রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে অংশ নেবেন। সেখানে রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের মিশনগুলোর প্রাধিকারভুক্ত কার্যাবলি, কর্মপরিকল্পনা, বিশেষ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন, অর্থনৈতিক কূটনীতি, মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বৃদ্ধি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, অভিবাসন, মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃসংস্থা সহযোগিতা উন্নয়ন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ইত্যাদি উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন। সম্মেলনে মিশনগুলো সংশ্লিষ্ট দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা-বিপত্তির বিষয়েও অবহিত করার সুযোগ পাবেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন ধরনের ইস্যু বের হচ্ছে। আমরা বিনিয়োগ, বাণিজ্য, জনবলের মানসম্মত সম্পৃক্ততা চাই। সম্প্রতি কিছু অসুবিধা হচ্ছে সেসব দেশে। আমাদের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীও যাবেন। আমাদের রাষ্ট্রদূতরা তুলে ধরবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যা যা করার সেগুলো আমরা দেখব।’ মন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের মূল রেমিট্যান্স আসে। প্রধানমন্ত্রী ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ফলে আমাদের রেমিট্যান্সপ্রবাহ অনেক বেড়ে গেছে। এর আগে রেমিট্যান্সপ্রবাহ স্থবির অবস্থায় ছিল। এখন ১৬-১৭ শতাংশ বেড়েছে। ১৮ বিলিয়ন হবে বলে আমরা আশা করছি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গত নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী সফরে যাওয়ার পর ইউএই বাজার উন্মুক্ত করতে রাজি হয়েছে। প্রায় ছয় বছর ওই বাজার বন্ধ ছিল। এরপর তারা নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে যে তারা বাজার উন্মুক্ত করবে। তবে আমাদের বিভিন্ন ধরনের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আছে। তারা কিছু শর্ত দিয়েছে—যারা যাবে তারা যাতে দক্ষ কর্মী হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে একাধিক বিনিয়োগ প্রস্তাব আমরা ইউএই থেকে পেয়েছি। কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পেয়েছি। তারা আমাদের রিফাইনারি, জ্বালানি খাতে বড় রকমের বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলোর ব্যাপারে কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। প্রধানমন্ত্রী গেলে প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হবে। এ জন্য তাঁর যাওয়াটা আমাদের দেশের জন্য মঙ্গলজনক।’
এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, ‘ইউএই এখন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) চেয়ারম্যান। তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতর করার বিশেষ কারণ আছে। যেহেতু তারা অনেক বিনিয়োগ প্রস্তাব এনেছে, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই আমরা সম্পর্ক জোরদার করতে চাই।’
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সব সময় স্থিতিশীলতা ও শান্তি চায়। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বলা হয়েছে, চোখ-কান খোলা রাখতে, যাতে তাঁরা বিবদমান কোনো পক্ষের লোক হিসেবে চিহ্নিত না হন।
সানবিডি/এনজে