৬১টি স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থার ব্যাংকে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার বিধান করে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলটি উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাতদিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
‘স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন ২০২০’ শীর্ষক বিলটি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী জানান, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান প্রয়োজন; যা বর্তমানে সংগৃহীত রাজস্ব দ্বারা মেটানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। সংস্থাগুলোর তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার মাধ্যমে সরকারের গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিলটি আনা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সংস্থাগুলোর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা পড়ে আছে, যা জনগণের জন্য ব্যবহার করা সমীচীন।
বিলের বিধান অনুযায়ী সংস্থাগুলোর বার্ষিক পরিচালন ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক বরাদ্দকৃত ব্যয় এবং আপত্কালীন ব্যয়ের জন্য বার্ষিক পরিচালন ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত অর্থ প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
বিলটি উত্থাপনের আগে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম এতে আপত্তি জানান। কিন্তু তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সংসদে বিল সম্পর্কে আপত্তি জানিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, সরকার ঠিকমতো রাজস্ব আদায় করতে না পেরে এখন এসব সংস্থার ফান্ডে হাত দিতে এ বিল আনছে। যে সংস্থাগুলোকে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে, এগুলোর অন্তত ১০টি জয়েন্ট স্টকে নিবন্ধিত। এগুলোর টাকা আপনি নিয়ে নিতে পারেন না। এগুলোর অনেকগুলোর শেয়ার মার্কেটে শেয়ার আছে। কেউ এগুলোর শেয়ার আর কিনবে না। আপনি এগুলোর লভ্যাংশ নিয়ে যাবেন, এতে পলিটিক্যালি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে পুঁজিবাজার একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিলটি সংসদীয় কমিটিতে যাবে। সেখানে এ-জাতীয় আলোচনার সুযোগ আছে। আপনার প্রতিটি শব্দের জবাব আমার কাছে আছে। আমি সেখানে দেব। তাতে আপনাকে খুশি করব।
ফখরুল ইমামের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বিলটি উত্থাপন করেন। বিলের তফসিলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো জাতীয় কারিকুলাম ও টেক্সটবুক বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও দিনাজপুর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ রাজশাহী), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ চা বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।