অনেকে বলছেন ১৪ জানুয়ারি থেকে উইন্ডোজ ৭ মৃত। এর অর্থ কিন্তু এ নয় যে পিসিতে আর উইন্ডোজের এ সংস্করণটি চলবে না। প্রকৃতপক্ষে উইন্ডোজ ৭ এর জন্য আর কোনো হালনাগাদ দেবে না মাইক্রোসফট। এর অর্থ এই অপারেটিং সিস্টেম চালিত ডিভাইসগুলো এখন হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। দিন দিন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে এসব পিসি। তাহলে তাৎক্ষণিক সমাধান হতে পারে পিসি আপগ্রেড করে উইন্ডোজ ১০ এ চলে যাওয়া। কিন্তু যাদের পিসি অনেক পুরনো এবং কনফিগারেশন বেশ দুর্বল তারা কী করবেন। এ ধরনের পিসিতে উইন্ডোজ ১০ ইনস্টল করা গেলেও গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার ড্রাইভার নাও পেতে পারে। আবার কনফিগারেশন দুর্বল হলে পিসি বিরক্তিকর রকম স্লো হয়ে যাবে। তাহলে উপায় কী?
উইন্ডোজ ৭ এ থেকে যান
বলা হয়, এক্সপির পরেই মাইক্রোসফটের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৭। ভিস্তার ব্যাপক ব্যর্থতার পর এ সংস্করণটি দিয়েই ঘুরে দাঁড়ায় মাইক্রোসফট। এরপর উইন্ডোজ ৮ সংস্করণে অসংখ্য বাগসহ হাজির হয় মাইক্রোসফট। মূলত ১০ সংস্করণটি সেসব বাগ সারানোর একটি প্রক্রিয়া বলেই মনে করা হয়। যদিও এ সংস্করণটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তারপরও এখনো এক চতুর্থাংশ পিসিতে উইন্ডোজ ৭ চলে। চাইলে আপনি প্রিয় সংস্করণেই থেকে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিটা নিজেকেই নিতে হবে। তবে এ ঝুঁকি ন্যূনতম মাত্রায় নামিয়ে আনতে চাইলে যা করতে পারেন:
অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার
উইন্ডোজ ৭ এর হালনাগাদ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে এ সংস্করণের সঙ্গে থাকা বিনামূল্যের অ্যান্টিভাইরাসটিও অকেজো হয়ে যাওয়া। মাইক্রোসফট সিকিউরিটি এসেনশিয়াল যথেষ্ট শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস। এখন এর বিকল্প হিসেবে আপনাকে বেছে নিতে হবে কোনো প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এটি হতে পারে ম্যাকাফি অথবা এভিজি। নরটন সিকিউরিটি প্রিমিয়াম সবচেয়ে ভালো সমর্থন দিতে পারে। এটি এখনো উইন্ডোজ এক্সপিতেও সমর্থন দেয়। আপনি যদি সাধারণ ব্যবহারকারী হোন তাহলে এ সফটওয়্যারগুলো যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে সক্ষম।
সফটওয়্যার ব্যবহারে সতর্কতা
নিশ্চিত না হয়ে কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করবেন না। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার এখনি আনইনস্টল করে ফেলুন। যে সফটওয়্যারই ব্যবহার করুন না কেন হালনাগাদ রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত ম্যালওয়্যার স্ক্যান করুন।
ব্রাউজার
আজকাল ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হওয়ার প্রধান মাধ্যম ব্রাউজার। ব্রাউজারের নিরাপত্তা ত্রুটির কারণেই বেশিরভাগ আক্রমণের ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ব্রাউজার যেমন, গুগল ক্রোম, অপেরা বা ফায়ারফক্স ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্য ফায়ারফক্সে সম্প্রতি বড় ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি ধরা পড়েছে। দ্রুত এটি হালনাগাদ করে নিন। অন্য ব্রাউজার ব্যবহার করলে সেগুলোও সব সময় হালনাগাদ রাখুন। ব্রাউজারের সেটিং বা অপশন থেকে অ্যাবাউট ট্যাবে গেলেই আপনাকে হালনাগাদের অবস্থা দেখাবে। কোনোভাবেই ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহার করবেন না।
মাইক্রোসফট অফিস
এমএস অফিসের ২০০৭ সংস্করণ ব্যবহার করলে দ্রুত আপগ্রেড করুন। কারণ এ সংস্করণটির হালনাগাদ আর দেয় না মাইক্রোসফট। ২০১০ সংস্করণটি ব্যবহার করতে পারেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এটির হালনাগাদ পাবেন।
হ্যাকার থেকে দূরে থাকুন
সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকতে চাইলে আপনার উইন্ডোজ ৭ পিসির ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দিন। লেখালেখি, সিনেমা দেখা, গান শোনা, টিভি দেখা বা পুরনো গেম খেলার জন্য এ পিসি বরাদ্দ রাখতে পারেন। সম্পূর্ণ অফলাইনে রেখে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করুন!
উইন্ডোজ ৭ এর বিকল্প
আপনার পিসিটি অনেক পুরনো ও দুর্বল হলে বা নতুন অপারেটিং সিস্টেম কেনার পেছনে পয়সা খরচ করতে না চাইলে আপনার জন্য চমৎকার একটি বিকল্প রয়েছে। উইন্ডোজ বা প্রিমিয়াম সফটওয়্যার ব্যবহার করা ছেড়ে দিন। লিনাক্সের অসংখ্য ডিস্ট্রিবিউশন রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ ফ্রিতে পাবেন। পাশাপাশি আপনার পছন্দমতো ডিস্ট্রিবিউশন বেছে নিতে পারেন। উইন্ডোজের ফ্লেভার পেতে চাইলে আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে জরিন ওএস (Zorin OS)।
লিনাক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিস্ট্রিবিউশন উবুন্টু। এটির ওপর ভিত্তি করেই বানানো আরেকটি ডিস্ট্রিবিউশন হলো লিনাক্স মিন্ট (Linux Mint)। এটিও দেখতে উইন্ডোজের মতো। আপনার কম্পিউটার হার্ডওয়্যার যদি খুব পুরনো ও দুর্বল হয় যেমন, পেন্টিয়াম প্রসেসর, ২ গিগা র্যাম এরকম পুরনো হলেও বেছে নিতে পারেন লুবুন্টু (Lubuntu) এর মতো লাইটওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন। এসব লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে হার্ডওয়্যার ড্রাইভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যায়। আর পিসি হার্ডওয়্যার যথেষ্ট শক্তিশালী হলে ব্যবহার করতে পারেন উবুন্টু, ফেডোরা, কুবুন্টু। প্রযুক্তিতে খুব আগ্রহী হলে ইনস্টল করতে পারেন আর্চ লিনাক্স।
তাছাড়া আপনি একই পিসিতে একাধিক লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি উইন্ডোজের পাশাপাশিও রাখতে পারেন। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হওয়ার পর উইন্ডোজ থেকে স্থায়ীভাবে লিনাক্সে মাইগ্রেট করতে পারেন।
দৈনন্দিন সাধারণ কাজের জন্য লিনাক্স ব্যবহার করাই হতে পারে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত। লেখালেখির জন্য লিবরা অফিস (LibreOffice), অপেন অফিস হতে পারে এমএস অফিসের চমৎকার বিকল্প। ওয়েব সার্ফের জন্য ফায়ারফক্স, ক্রোম দুটোই ব্যবহার করা যায়। মেইল ক্লায়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন থান্ডারবার্ড। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে আলাদাভাবে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া লিনাক্সের জন্য অসংখ্য ফ্রি সফটওয়্যার পাওয়া যায়।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস