২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, উগান্ডাসহ ৮২ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আর্থিক হিসাবে এর পরিমাণ ১৫ হাজার ৪২১ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার। গতকাল স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বর্তমানে নেপাল ছাড়া সার্কভুক্ত সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানে মোট পণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪০৮ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। এ সময় এসব দেশ থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩৯৬ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৯৮৮ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার।
সংসদ অধিবেশনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ১৯৯১-১৯ সাল পর্যন্ত ৯ লাখ ২ হাজার ৪৮২ জন নারী কর্মী বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। গত ২৭ নভেম্বর জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভায় নারী শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিদেশগামী নারী কর্মীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া তদারকির মাধ্যমে অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ছয় সদস্যবিশিষ্ট ‘বিদেশগামী নারী কর্মী সুরক্ষা সেল’ গঠন করা হয়েছে।
বিএনপির জিএম সিরাজের প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত ১৭৩টি দেশে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণ বাড়লেও মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ কাতার, কুয়েত ও বাহরাইনে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে কর্মী পাঠানো কমেছে।
তিনি বলেন, গত বছর সৌদি আরবে ৩ লাখ ৯৯ হাজার কর্মী পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে পাঠানো হয়েছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ জন। কাতারে গত বছর ৫০ হাজার ২৯২ জন কর্মী পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে পাঠানো হয়েছিল ৭৬ হাজার ৫৬০ জন। আর ২০১৯ সালে কুয়েতে ১২ হাজার ২৯৯ কর্মী পাঠানো হয়েছে। আগের বছর তা ছিল ২৭ হাজার ৬৩৭ জন। বাহরাইনে গত বছর ১৩৩ জন কর্মী পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে দেশটিতে ৮১১ জন কর্মী পাঠানো হয়েছিল।
ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত বছর কর্মী পাঠানো আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। গত বছর ওমানে ৭২ হাজার ৬৫৪ জন পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে গিয়েছিলেন ৭২ হাজার ৫০৪ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত বছর ৩ হাজার ৩১৮ জন পাঠানো হয়। আগের বছর দেশটিতে পাঠানো হয়েছিল ৩ হাজার ২৩৫ জন।
জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের প্রশ্নের উত্তরে ইমরান আহমদ জানান, ২০০৯-১৯ সাল পর্যন্ত বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৪ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেছেন এবং ১৫৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, বিদেশে কর্মী প্রেরণে প্রতারণা বন্ধ ও প্রতারণার শাস্তির বিধান রেখে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। এতে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণে প্রতারণার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং অন্যূন ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান আছে। বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান আছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস