বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে এই কার্যক্রম। হাতে লেখা পাসপোর্টের পর এবার পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ইস্যু। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি এমআরপিও চলবে। এই মুহূর্তে ছয় মাসের বেশি মেয়াদ রয়েছে এমন এমআরপিধারীদের ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। মেয়াদ শেষে এমআরপি নবায়নের জন্য আবেদন ও নির্ধারিত ফি জমা দিলেই তারা পাবেন ই-পাসপোর্ট। তাই তাদের এই মুহূর্তে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন দেশের প্রথম ই-পাসপোর্ট। নিজের নামে ইস্যু করা ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করে বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট বিতরণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামেও ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। যা তার হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ই-পাসপোর্ট ইস্যুর সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী এই তিনটি আঞ্চলিক পাটপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে। পরে দেশের সব জায়গায় (৭২টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিসে) এবং বাংলাদেশের ৮২টি বৈদেশিক মিশনে এ কার্যক্রম চালু হবে। কারণ, এই মুহূর্তে দেশের সর্বত্র ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালানোর মতো জনবল বা কারিগরি সক্ষমতা নেই। তবে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব জায়গায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, একেবারে নতুন এবং যাদের এমআরপির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, নবায়ন করতে হবে, এমন নাগরিকদের কাছ থেকেই আমরা ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র নিচ্ছি। তাদের নামেই ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশে বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে ৫০টি ‘ই-গেট’ স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করা নয়টি ‘ই-গেট’ দিয়ে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারের সুবিধা মিলবে।
সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে। পাশাপাশি পিডিএফ ফরম ডাউনলোড করে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি সত্যায়ন করতে হবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক চলাচলের ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপত্তা সংরক্ষণ এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচলকে আরও সহজ, ঝামেলাহীন ও সময় সাশ্রয়ী করতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত দেশের কাতারে জাতীয় অবস্থান এবং মর্যাদা সুসংহত করতেই চালু হয়েছে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম।
পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদি এবং ৪৮ ও ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ভিন্ন ভিন্ন ফি দিয়ে পাওয়া যাবে। নতুন পাসপোর্টের ক্ষেত্রে অতি জরুরি তিন দিনে, জরুরি সাত দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ২১ দিনের পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে পুরনো অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার ক্ষেত্রে অতি জরুরি পাসপোর্ট দু’দিনে, জরুরি পাসপোর্ট তিন দিনে ও সাধারণ পাসপোর্ট সাত দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা, জরুরি ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি সাড়ে সাত হাজার টাকা। ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি ফি সাত হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি নয় হাজার টাকা।
এছাড়া ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, জরুরি ফি সাড়ে সাত হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি সাড়ে ১০ হাজার টাকা। আর ১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি সাত হাজার টাকা, জরুরি ফি নয় হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি ১২ হাজার টাকা। সুত্র-কালের কন্ঠ
সানবিডি/এনজে