বিদায়ী ২০১৯ বছরের শেষভাগ থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এর আগে বিদায়ী বছরের বাকি সময়েও পণ্যটির আমদানিতে মন্দা বজায় ছিল। এ সময় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এ পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থলবন্দরের আমদানিকারক, পাইকার ও শ্রমিকরা। অনেকেই বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ আবার জীবিকার তাগিদে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এ স্থলবন্দর দিয়ে দেশীয় আমদানিকারকরা ভারত থেকে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫২ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন। ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৫ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পণ্যটির আমদানি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬২৭ টন। চলতি বছরও এ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
এবিষয়ে স্থানীয় পাইকাররা জানান, আগে চাহিদার সিংহভাগ পেঁয়াজ হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকদের হাত ঘুরে দেশে ঢুকত। এর পর এসব পেঁয়াজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যেত। চাহিদা বেশি থাকলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৬০-৭০ ট্রাকে ১ হাজার ৫০০ টনের মতো পেঁয়াজ আমদানি হতো। আর চাহিদা পড়তির সময় পণ্যটির আমদানি দৈনিক ২৫-৩০ ট্রাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টনে নেমে আসত।
অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির জের ধরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর পর দেশটি থেকে পণ্যটির আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ৪ অক্টোবর ও ২২ অক্টোবর দুই দফায় আগে বুকিং দেয়া ১ হাজার ৫০ টনের মতো পেঁয়াজ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে।
প্রায় চার মাস ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থলবন্দরের বিভিন্ন আমদানিকারকের গুদামে কাজ করা তিন শতাধিক শ্রমিক। কাজ না থাকায় কেউ কেউ ঢাকায় চলে গেছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন পেঁয়াজ কেনাবেচায় সম্পৃক্ত পাইকাররা।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কেনাবেচায় সম্পৃক্ত ছিলেন রবিউল ইসলাম বলেন, এ বন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন ন্যূনতম ২৫-৩০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো। আমদানি করা এসব পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হতো। আমরা বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের হয়ে স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজ কিনে তাদের কাছে পৌঁছে দিতাম। বিনিময়ে ট্রাকপ্রতি কমিশন পেতাম। এখন পণ্যটির আমদানি বন্ধ থাকায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। আমাদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থলবন্দরের গুদামে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোস্তাকিম হোসেন। তিনি জানান, ট্রাক থেকে বিক্রির পর অবশিষ্ট থাকলে সেসব পেঁয়াজ গুদামে এনে রাখতেন আমদানিকারকরা। এসব গুদামে লোড-আনলোডের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিন শতাধিক শ্রমিক। শ্রমিকরা বাছাই এবং ভালো মানের পেঁয়াজ বাজারে পৌঁছে দেয়াসহ নানা ধরনের কাজ করতেন। এখন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় গুদামগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। কাজ হারিয়েছেন শ্রমিকরা।
মোস্তাকিম হোসেন বলেন, চার মাস ধরে কাজ নেই। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা। কেই বিকল্প পেশা খুঁজে নিয়েছেন। কেউ গার্মেন্টসে কাজ করতে ঢাকায় চলে গেছেন। তবে স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে ফের সবাই কাজে ফিরে আসবেন।
স্থানীয় আমদানিকারক মাহফুজার রহমান বাবু বলেন, এ স্থলবন্দরে ১৫ জন পেঁয়াজ আমদানিকারক রয়েছে। প্রত্যেকের গুদামেই ১৫-২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। চার মাস ধরে সবকিছু বন্ধ। এতে আমদানিকারকরা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনি শ্রমিকরাও কাজ হারিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিক-আমদানিকারক সবাই নতুন করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন। সূত্র-বণিক বার্তা
সানবিডি/এনজে