বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বের হতে পারবে বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে উন্নতির মাধ্যমেই এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলেও মনে করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) এলডিসি রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ মত দেয় সিপিডি।
ড. দেবপ্রিয় এসময় বলেন, এলডিসি থেকে উন্নতীর মাধ্যমে বের হয়ে আসতে যে তিনটি সূচকে উন্নতী করতে হয় তার মধ্যে অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশ উন্নতী করেছে। বাকী থাকে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয়। মাথাপিছু আয় বর্তমানের দ্বিগুন করলেই কেবল এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন হবে। যা আগামী তিন বছরে সম্ভব নয়। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থায় ৬৩ দশমিক ৮। আর এলডিসি থেকে বের হতে প্রয়োজন ৬৬। অর্থাৎ এর মাধ্যমেই এলডিসি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব বলে তিনি মত দেন।
সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে এই সূচকে উন্নতির মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষণ তালিকার মধ্যে ঢুকে যেতে পারে বাংলাদেশ। এরপর ছয়বছর এসব সূচক ধরে রাখতে পারলে ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সরকারের একটি উত্তোরণ পরিকল্পনা নেয়া দরকার বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা এখনো দেখছি না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে এক্ষেত্রে।
এলডিসি রিপোর্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে ভূমির উৎপাদনশীলতায় বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে। অথচ শ্রমের উৎপাদনশীলতায় অবস্থান ২০ নম্বরে। অর্থাৎ জমির ব্যবহার এখানে বেশি হচ্ছে, সেই তুলনায় শ্রমের ব্যবহার কম হচ্ছে। এটি নেতিবাচক দিক। তিনি বলেন, কৃষিতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা না বাড়াতে পারলে দারিদ্র দূর করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোন দেশের পক্ষে নি¤œ মধ্যম আয় থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যেতে কৃষির রূপান্তর ছাড়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষির উন্নয়নে তিন ধরণের সংযোগ বাড়াতে হবে। এগুলো হলো- শহরের সাথে গ্রামের, কৃষির সঙ্গে শিল্পের এবং দেশের সঙ্গে বিদেশের- অর্থাৎ রফতানি বাণিজ্য বাড়ানো।
মধ্যম আয়ের দেশই সব কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এইসব ক্যাটাগরি করা হয় শুধু আয়ের দিক থেকে। কিন্তু স্বল্পন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশের তালিকা হয় ওই তিনটি সূচেকর উত্তরণের মাধ্যমে। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে অনেক উন্নত দেশ আছে যারা এখনো স্বল্পন্নত দেশের তালিকার মধ্যে। তাই আমাদের মাথাপিছু আয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে সামষ্টিগত উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ করা হয়েছে। তার যুদ্ধক্ষে হলো এলডিসি। এইসব দেশ কতটুকু উন্নয়ন করতে পারলো তার উপরই নির্ভর করবে এসডিজির লক্ষ্যপুরণ।
এলডিসি রিপোর্টের সারাংশ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিতুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ৯ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে আসলে তার জন্য বেশকিছু সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। তিনি বলেন, এলডিসি দেশগুলোর উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃষিখাত। উন্নত দেশগুলোতে কৃষি উৎপাদনের তুলনায় এসব দেশের উৎপাদন অনেক কম। এখানে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়। এছাড়া জলবায়ুর প্রভাব তো রয়েছেই।