মারণঘাতি করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে পুরো চীন। ভয়ঙ্কর এই এক ভাইরাসের পেছনেই ছুটছে প্রভাবশালী এ দেশটি। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক- সবাইকে ভাবাচ্ছে বিষয়টি। শুধু কি তাই? প্রাণঘাতী ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ানোর কারণে আতঙ্ক এখন বিশ্বজুড়ে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনে এটাকে একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা থেকে কুনমিং এবং গুয়াংজুগামী ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা গত দুদিনে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। গত রাতে একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স তার পূর্ব নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করেছে।
অগ্রিম ফ্লাইটের বুকিং বাতিল করা ছাড়াও টিকেট কনফার্ম থাকার পরও যাত্রী বিমানবন্দরে উপস্থিত না হওয়ার (নো শো) পরিমাণ বড়ছে। চায়না সাউদানের বিমাবন্দরের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, সোমবার রাতের গুয়াংজুগামী তার ফ্লাইটে ৯০ জনের কনফার্মেশেন ছিল। তারা সবাই চীনের নাগরিক। কিন্তু চূড়ান্তভাবে ৭০জন গেছেন। বাকী ২০জন চীনের নাগরিক শেষ পর্যন্ত যাননি। তারা নো শো হয়েছেন।
মঙ্গলবারের ফ্লাইটে যাত্রী প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি। ওই কর্মকর্তার মতে, সরকারের নির্দেশনা না পওয়া পর্যন্ত ফ্লাইট চলবে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছেন। কর্মীদের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। দায়িত্ব পালনকালে তারা মাস্ক, হেক্সাসল এবং গ্লাবস ব্যবহার করছেন জানিয়ে ডিউটি অফিসার সালাউদ্দিন বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা কতটা নিরাপদ? তা নিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্যে আছি। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমের মতে, উহান ভাইরাস পুরো এশিয়ার ট্যুরিজমে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলবে। এর ক্ষতির প্রভাবও হবে সুদূর প্রসারী। তিনি বলেন, চীনের প্রচুর ট্যুরিস্ট বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের অনেকে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক কারণ ছাড়াও ভ্রমণে চীনকে বেছে নেন। বিশেষ করে শীতকাল বা তার কাছাকাছি সময়ে।
কিন্তু ভাইরাসের কারণে এবার সেটি বাধাগ্রস্ত হলো। ১০-১৫ দিন পর এটির প্রভাব আরও দৃশ্যমান হবে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের এখনও নাজুক অবস্থায় থাকা পর্যটন শিল্পের জন্য এটি একটি বড় আঘাত বলে মন্তব্য করেন ওই বিশেষজ্ঞ। বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার মুখপাত্র কামরুল ইসলাম মনে করেন এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনে বড় ধাক্কা। ট্যুরিজম সেবা প্রতিষ্ঠান গুলশানের এওট্যেক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল আলম নয়নের প্রাক্কলন হচ্ছে চীনা ভাইরাসের কারণে দক্ষিণ এশিয়া এবং দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের যাতাযাত ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে। তবে চীন পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে এবং মানুষের মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্ক কাটলে এটি আরও কমে আসবে। তবে এটি যে ধাক্কা তা মানছেন তিনিও। বেইজিংয়ের ডেটলাইনে প্রচারিত রিপোর্ট বলছে, করোনাভাইরাসে চীনে মৃত্যুর সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। দেশজুড়ে বহু শহরে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, ভ্রমণ কিংবা চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এটি আরও কড়া হচ্ছে। উহান শহর, যেখান থেকে প্রথম ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছ, সেই শহরটি কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার।
ছুটির মৌসুমে তাদের শাখাগুলো সব বন্ধ থাকবে। এরমধ্যে কয়েকটি কোমপানি সমগ্র চীনজুড়ে কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। বাকিগুলো শুধু অবরুদ্ধ শহরগুলোতে। ডিজনি সাংহাই ও হংকং-এ তাদের পার্কগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। চন্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে এসবে ছিলো বিশেষ সব আয়োজন। প্রসাধনী কোমপানিগুলো জানিয়েছে, বছরের এই সময় সাধারণত তাদের বেচাকেনার উর্ধ্বগতি থাকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের বেচাকেচা উলটো কমে গেছে। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু করেছে চীনের অর্থনীতি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও দেশটিতে বিনিয়োগকারীরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যবসা ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শিল্পগুলোর সাপ্লাই চেইন ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফলে পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন এক সংকটের দ্বারপ্রান্তে অর্থনীতি।