২০২৫ সাল নাগাদ ভারতের অর্থনীতির আকার ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার।
এ লক্ষ্য পূরণে আগামী চার বছর দেশটির গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে এ লক্ষ্য অর্জনে দেশটির রফতানিও অনেক বেশি বাড়ানো দরকার, যা প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে। যদিও দেশটির ২০১৯ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৬ দশমিক ১ থেকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
এ পরিস্থিতিতে দেশটির শুল্ক কমাতে সার্বিক কর ব্যবস্থা বিশেষত পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) ঢেলে সাজাতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউএস ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফোরাম (ইউএসআইএসপিএফ) ও ইউএস ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসআইবিসি)।
এসব পদক্ষেপ দেশটির ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির স্বপ্ন পূরণ ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে ইউএসআইএসপিএফ। এছাড়া এসব সুপারিশ দেশটির প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়তে ও বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে বলেও জানায় সংস্থাটি।
এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির কর ব্যবস্থা সম্পর্কে ইউএসআইএসপিএফের মন্তব্য, বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমেই ডিজিটাল হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতের ডিজিটাল কর ব্যবস্থাও এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে তা বৈশ্বিক কর ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। দেশটির ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়া, কর ব্যবস্থা, জিএসটি কমপ্লায়েন্স, করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ব্যয় ও ডিজিটাল কর ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে এ নিয়ে চতুর্থ শিল্প সুপারিশ উপস্থাপনের কথা জানিয়েছে ইউএসআইএসপিএফ।
এদিকে ১ ফেব্রুয়ারির দেশটির ২০২০-২১ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট বক্তৃতা পেশ করবেন সীতারমণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধারাবাহিকভাবে নিজেদের উপস্থাপিত সুপারিশগুলোয় সিএসআর খাতের ব্যয় বাধ্যতামূলকভাবে ২ শতাংশ করার আহ্বান জানিয়েছে ইউএসআইএসপিএফ, যা করপোরেটগুলোর কর মওকুফে সহায়তা করবে।
আইনি ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত না করা পর্যন্ত দেশটির পরিকল্পিত জিএএসটি ই-ইনভয়েসিং প্রকল্প স্থগিত রাখারও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসকেও জিএসটির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে একই সংস্থা। অন্যদিকে দেশটিতে বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে করনীতি সুসংহত ও শুল্ক আইন সংস্কারেরও সুপারিশ করেছে ইউএসআইএসপিএফ। আইনি ও প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জ সমাধানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক বাধা দূর করা গেলে দেশটির এসব বিষয় ঢেলে সাজানো যেতে পারে বলে মনে করে সংস্থাটি।
দেশটিতে ইন্স্যুরেন্স খাতে ব্যবসা সহজ করতে মূলধন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাড়তি শর্তারোপ ছাড়া কোম্পানিগুলোর সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) শতভাগ বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছে ইউএসআইএসপিএফ। অন্যদিকে দেশটির রিইন্স্যুরেন্স খাতও সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি গণমাধ্যম ও বিনোদন খাতের ওপর দেশটির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করেছে ইউএসআইবিসি। ইউএসআইবিসির সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরির জন্য ভারতের এখনই সুসময়। মূল্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে এফডিআই—সব খাত ঢেলে সাজাতে এখনই দেশটির উদ্যোগ নেয়া দরকার। এসব নীতিমালা ব্যবসাবান্ধব হলে উদ্ভাবন বাড়বে বলে জানিয়েছে ইউএসআইবিসি।
এদিকে সারা দেশে যোগাযোগ ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা জোরদার করতে স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন মার্কেট (স্যাটকম মার্কেট) শুরুরও পরামর্শ দিয়েছে ইউএসআইবিসি। ব্রডব্যান্ড প্লাস ফাইভজি ও নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি বাড়াতে ভারত সরকারের বড় ধরনের পদক্ষেপ দেশটির অর্থনীতিকে ডিজিটাল করার গতি ত্বরান্বিত করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) পণ্যে আরোপিত শুল্ক হার কমানো হলে খাতটিতে দীর্ঘমেয়াদে দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিযোগিতা ও ডিজিটাল নেতৃত্ব শক্তিশালী হবে বলেও জানিয়েছে ইউএসআইবিসি। এ উদ্যোগ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে শক্তিশালী করার পাশাপাশি চীন ছাড়তে আগ্রহী কোম্পানিগুলো ভারতমুখী করতে সহায়তা দিতে পারে বলে মনে করে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের আওতাধীন সংস্থাটি। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে