মোংলা বন্দরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। ছয় মাসের ব্যবধানে এ বন্দরে রাজস্ব বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। পাশাপাশি বেড়েছে বন্দরে বিদেশী জাহাজের আগমন, নির্গমন ও পণ্য খালাস।
এদিকে এ বন্দরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের চিত্রই পাল্টে যাবে বলে আশাবাদী বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এক দশক আগেও ব্যয়ভার বহনে বড় অংকের লোকসান গুনতে হতো কর্তৃপক্ষকে। ২০০৮ সাল থেকে এ বন্দরে গাড়ি, খাদ্যশস্য, সার ও ক্লিংকার আমদানি এবং হিমায়িত পণ্য রফতানি শুরু হওয়ার কারণে লোকসান কাটিয়ে বর্তমানে বন্দরটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বন্দরে জাহাজ আগমন-নির্গমন বৃদ্ধিতে শ্রমিকদের কাজও বেড়েছে।
মোংলা বন্দরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (বাজেট) মো. রুমান হাওলাদার স্বাক্ষরিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের গত ডিসেম্বরের আয়-ব্যয়ের সংক্ষিপ্ত সার (প্রভিশনাল) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোংলা স্থলবন্দরে বিদেশী জাহাজ আগমন বেড়েছে ৩২টি, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। আর বিদেশী জাহাজ নির্গমন বেড়েছে ২৮টি বা শতকরা ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। কার্গো বা পণ্য ওঠানামা বেড়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন বা ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ২ হাজার ৩৭১টি বা ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া রাজস্ব আয় বেড়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। তবে একই সময় রাজস্ব ব্যয় বেড়েছে ১৫ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার টাকা বা ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।
মো. রুমান হাওলাদার জানান, মোংলা বন্দরে চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে জাহাজ আগমন ৩০০টি, নির্গমন ২৯০টি, পণ্য ওঠানামা ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার টন ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৯৬৫টি। এ সময় রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ৬০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যয় ছিল ৬৯ কোটি ২৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাহাজ এসেছে ৪১৬টি, আয় হয় ১৭০ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৪৮২টি, আয় হয় ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৬২৩টি, আয় হয় ২২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ বছরে জাহাজ আসে ৭৮৪টি, আয় হয় ২৭৬ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাহাজ আসে ৯১২টি, আয় হয় ৩২৯ কোটি ১২ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোংলা বন্দর এখন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য একটি বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। তাই দেশের স্বার্থেই মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বাড়ছে। নেপাল, ভারতসহ অন্য দেশের আমদানি-রফতানিতে এ বন্দরের প্রাধান্য বাড়ছে। কেননা ঢাকা থেকে এ বন্দরের দূরত্ব ১৬০-১৭০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর ২৭০ ও চট্টগ্রাম বন্দর ২৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শেখ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে মোংলা বন্দরের ইনার বার ড্রেজিংয়ের জন্য ৭৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পটি ২০২২ সালে সম্পন্ন হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে অবস্থান নিতে পারবে, যা বন্দরের গতিশীলতাকে আরো বাড়াবে। আর এ কাজটি নির্বিঘ্ন করতে চারটি জেটির কাজ চলমান রয়েছে, যা ২০২১ সালে সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বন্দরকে ঘিরে সরকারের নানা পরিকল্পনার কারণে এ বন্দর ক্রমেই গতিশীল হচ্ছে। বন্দর উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরের চিত্র পাল্টে যাবে।
মোংলা বন্দরের চিফ প্ল্যানিং অফিসার জহিরুল হক বলেন, পুরনো অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে গত ডিসেম্বরে ব্যয় বেড়েছে। ফলে ২০১৮-এর একই সময়ের তুলনায় ২০১৯ সালে নিট মুনাফা সামান্য হ্রাস পেয়েছে। সব মিলিয়ে বন্দরের কার্যক্রম ও অগ্রগতি ইতিবাচক অবস্থানেই রয়েছে। অর্থবছর শেষে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।