পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে তারল্য সুবিধা ও নীতিসহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সুপারিশ গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হবে।
পুঁজিবাজারে তারল্য সুবিধা প্রদানের বিষয়ে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক পত্রে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের সার্বিক স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্কুলার জারি করবে সে অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংকের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগকে বিশেষ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। একই সাথে এ বিনিয়োগ পাঁচ বছরের জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ সংশোধিত)-এর ২৬(ক) ধারা এবং একই আইনের ধারা ৩৮-এর প্রথম তফসিলের অধীন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনার ৪(খ) ক্রমিকের আওতা বহির্ভূত রাখার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেয়া হলো। এ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারকে টেকসই করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে তারল্য ও নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা অনুযায়ী তহবিলের জোগান দেয়া হবে। তবে এটা পুনঃঅর্থায়ন আকারে হবে। ব্যাংকগুলো পাঁচ বছরের মধ্যে তার সক্ষমতা অনুযায়ী এ তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলন ও পুনর্ভরণ করতে পারবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণীর অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো চলমান অবস্থায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ পাচ্ছে না। এর আগে কয়েকটি ব্যাংকের সাথে বৈঠকের পর তাদের মনোভাব জানিয়ে দেয়া হয়। যেহেতু ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারের নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না, এ কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিকল্প হিসেবে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজসহ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য একটি তহবিল গঠন করা হবে। ওই তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো তাদের ঋণগ্রহণের সক্ষমতা অনুযায়ী তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। যাদের ঋণ ফেরতের সক্ষমতা রয়েছে কেবল তাদেরই ঋণ প্রদান করা হবে। ঋণ পাওয়ার জন্য একটি মানদণ্ড নির্ণয় করা হবে। ওই মানদণ্ডে যারাই পড়বে তাদেরই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিলের জোগান দেয়া হবে। তবে সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এ ঋণ প্রদান করা হবে না। এজন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। ডিএসই ও সিএসই তালিকাভুক্ত এমন প্রায় আড়াই শ’ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ আছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর ৩৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ রয়েছে। অপর দিকে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ৬৩টি।
ব্যাংকগুলোর এ তহবিল ব্যবহারের সক্ষমতা কিভাবে নিরূপণ করা হবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আজ একটি নীতিমালা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এটি অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে রেপোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অর্থের সংস্থান করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তহবিল পেতে আবেদনের সময় দেয়া হয়েছিল তিন মাস। গত ৩১ ডিসেম্বর এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে একমাত্র সিটি ব্যাংক ৫০ কোটি টাকার তহবিল নিয়েছে। আর কোনো ব্যাংক সাড়া দেয়নি।
সানবিডি/এসকেএস