পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ও অবসায়ন প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের বর্তমান ও সাবেক ৪৬ পরিচালকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চার এমডি, ডিএমডিসহ ১৭ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে এসব ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আগের এক নির্দেশনায় সাবেক আট পরিচালকসহ ১১ জনের অ্যাকাউন্ট আগে থেকেই নিষ্ফ্ক্রিয় আছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের তালিকায় থাকায় লেনদেন বন্ধ রেখেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বিভিন্ন মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৩ দফা সময় বাড়ানো হয়েছে । সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে আরও ১৫ দিন শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছে ডিএসই। এর আগে ২৮ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, চতুর্থ দফায় ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবর, পঞ্চম দফায় ১৩ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর, ৬ষ্ঠ দফায় ২৮ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর, সপ্তম দফায় ১১ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর অষ্টম দফায় ২৬ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর, নবম দফায় ১১ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর, দশম দফায় ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি, ১১ দফায় ১২ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি এবং ১২ দফায় ২৭ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পরযন্ত লেনদেন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ডিএসই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে পিপলস লিজিং থেকে নামে-বেনামে পরিচালকদের বিপুল অর্থ বের করে নেওয়ার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। আমানতকারীরা অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। আমানতকারীদের পাওনা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঋণগ্রহীতা এবং সুবিধাভোগী বর্তমান ও সাবেক পরিচালক এবং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আগামী মার্চে বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অর্থ আদায় প্রক্রিয়া জোরদার হবে।
আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় গত জুলাইয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদন গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংয়ের খারাপ অবস্থার জন্য অভিযুক্তদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দেন বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বিচারপতির বেঞ্চ সাবেক ও বর্তমান পরিচালক এবং কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের এ আদেশ দিয়েছেন।
অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের তালিকায় আছেন- আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মনোনীত পরিচালক ও বর্তমান চেয়ারম্যান নাউং চৌ মং, একই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পরিচালক উজ্জ্বল কুমার নন্দী, ভাইস চেয়ারম্যান নিজামুল আহসান, পরিচালক সাইমা ইসলাম, মনোনীত পরিচালক নাই আয় চিং ও আফরুজা সুরাইয়া মজুমদার, স্বাধীন পরিচালক আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, শেখর কুমার হালদার, ইকবাল সাঈদ, সুকুমার মৃধা, অমিতাভ অধিকারী ও এ এইচ ইকবাল হোসেন।
আগে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং এবারও ফ্রিজ করতে বলা হয়েছে সে তালিকায় আছেন- পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন, পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানি সামসুল আলামিন গ্রুপের আরেফিন সামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন ও হুমায়রা আলামিন, পিপলল লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক ও এসবিএসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক মতিউর রহমান, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিত কুমার রায় ও খবির উদ্দিন মিয়া।
নতুন করে তালিকায় আরও যুক্ত হয়েছেন- সাবেক পরিচালক কাজী মোমরেজ মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম, শামসুল ইসলাম মোল্লা, সাজিদুল হক, আমিনুল ইসলাম, এহসান ই মোয়াজ্জেম, ফারজানা মোয়াজ্জেম, সরদার নিয়ামুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, আশরাফ আলী, টিএম ফাতেহ কবির, কামরুন নাহার, একেএম শহিদুল ইসলাম, এইচবিএম লুৎফর রহমান, মোহাম্মদ ইরশাদ আলী, আকতারা খানম, মোহাম্মদ মশিউর রহমান, ইমাম শাহেদ হোসেন, মিলন হাবিবুর রহমান, টিআইএম নুরুল কবির, ড. মনোয়ার হোসেন, মশিউর রহমান ভূঁইয়া, লাইলা আহমেদ, চি?ন্ময় কুমার দত্ত ও মনিরা আক্তার।
সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা হলেন- এমডি এএফএম শামসুল হুদা, খন্দকার মঞ্জুর মুর্শেদ, সামি হুদা, এম এ ইউসুফ খান এবং ডিএমডি ড. কে মুশতাক আহমেদসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান, মানিক লাল সমাদ্দার, কাজী আহমেদ জামাল, মুকুত সুবাল ক্রুজ, খন্দকার ফাহিম ইউ আহমেদ, শুশি কুমার সাহা, মাহমুদ কায়সার, হারুন উর রশিদ, মোফাজ্জেল হোসেন খান, আশরাফুর রহমান চৌধুরী, নিপেন্দ্র চন্দ্র পণ্ডিত ও নুর উল আলম।