সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় অবস্থিত একটি গ্রাম নওগাঁ। এই গ্রামের কোল ঘেষে বয়ে চলা একটি নদী করতোয়া। সেই নদীর পানিতে ভাসছে পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজা হাঁস, বালি হাঁস, পাতি সরালি, পাতিকুট ও দেশি জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁসসহ অনেক চেনা-অচেনা অতিথি পাখি। প্রতিবছর শীতের শুরুতে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই করতোয়া নদীতে। এ যেন করতোয়ার মায়াজলে অতিথি পাখিদের মিলন মেলা। শীতের শুরুতে এসব পাখি এখানে মিলন মেলা বসায়। আবার শীতের শেষে চলে নিজের ঠিকানায়।
এই নদীতে দেখা যায়, করতোয়া নদীর পাড়ে শত শত মানুষের ভিড়। সকাল-সন্ধ্যা পাখির কিচিরমিচির আর জলে ডানা ঝাপটানোর শব্দ উপভোগ করছেন পাখি প্রেমিরা। দল বেঁধে যখন পাখিগুলো আকাশে ওড়ে, তখন তার সঙ্গে যেন উড়ে চলে মনও। পুরো এলাকাটিই সরব করে রাখে এই পাখিগুলো।
তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ খন্দকার জানান, শীত এলেই অতিথি পাখিগুলো যে কোথা থেকে আসে তা জানি না। তবে বেশকয়েক বছর ধরে প্রচুর পাখি আসে করতোয়ায়। এসব পাখি যেন কেউ শিকার করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও খেয়াল রাখে।
নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে মিনা কবির, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে স্বপ্না পারভীন ও নীরব আহম্মেদ এসেছেন পাখি দেখতে। এই পাখিপ্রেমীরা জানান, করতোয়া নদী অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে। খুব বড় না হলেও নদীটি পাখির কারণে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, উড়ে চলা, নীরবে বসে থাকা মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই এক নজর এই পাখিগুলো দেখার জন্য এখানে এসেছেন তারা।
স্থানীয় সাংবাদিক শায়লা পারভীন বলেন, ‘আমাদের অসচেতনতা কারণে সামান্য স্বার্থ বা শখের বশে কেউ কেউ শীতের অতিথি পাখিদের শিকার করছে। এক শ্রেণির অর্থলোভী পাখি শিকারিদের অত্যাচারে অনেক পাখিই আর নিজভূমে ফিরতে পারছে না। এটা আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। এই সব শিকারিদের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে তাড়াশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফফাত জাহান বলেন, ‘পাখি প্রকৃতির অলংকার। এই সব অলংকার ধ্বংস করা মানে পরিবেশ ধ্বংস করা। আমাদের দেশ দিনে দিনেই অতিথি পাখির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু আইন দিয়েই পাখি শিকার বন্ধ করা যাবে না। সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’