মধু আহরণে মৌমাছির কোন বিরাম নায়।সবসময় এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে চলা।
কবির ভাষায়-
মৌমাছি-মৌমাছি কোথা যাও নাচি-নাচি
দাঁড়াও না একবার ভাই..
ওই ফুল ফোটে বোনে
যায় মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নায়….
এই ক্ষুদ্র এই পতঙ্গটির সত্যিই কোন সময় নায়।এক পাউন্ড মধু উৎপাদনে মৌমাছির প্রায় ২০ লাখ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য মৌমাছিকে প্রায় ৮০ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। আর একটি মৌমাছি তার জীবনে এক চা চামচ পরিমাণ মধু সংগ্রহ করে। কানাডিয়ান হানি কাউন্সিল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ বলেন, প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাই তার তিন ভাগের এক ভাগ আসে মৌমাছির পরাগায়ন থেকে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে কীটপতঙ্গের মাধ্যমে যেসব উদ্ভিদের পরাগায়ন হয় তাতে শুধু মৌমাছির অবদানে ৮০ ভাগ।
তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষ খাবার হিসেবে যে ফলমূল-শাকসবজি ওপর বেশি নির্ভরশীল সেগুলোর ৭০ ভাগই উৎপন্ন হয় মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে। পৃথিবীতে প্রতি বছর মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে যে পরিমাণ খাদ্যের উৎপাদিত হয় সেগুলোর আর্থিক মূল্য আনুমানিক ২২ হাজার কোটি ডলার। এ অর্থনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী ১৪০ কোটি মানুষের জীবিকা।
বর্তমান জনসংখ্যার জন্য খাবারের জোগান দিতে প্রয়োজন বাড়তি উৎপাদন। আর মৌমাছির সহায়তা ছাড়া এ উৎপাদন এক প্রকার অসম্ভব। তাই মৌমাছির জীবন হুমকির মুখে পড়লে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও হুমকির মুখে পড়বে। একটি মৌচাকে যত মৌমাছি বাস করে তার চারপাশে চার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে যত ফুল ফোটে মৌমাছি একদিনে সেগুলোতে ঘুরে মধু সংগ্রহ ও পরাগায়ন করতে সাহায্য করে।
এ বিষয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেনের মতে, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়।
মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করায় মূলত মৌমাছি পালন। একটি মৌচাকে গড়ে প্রায় ২০ হাজার মৌমাছি থাকে। একটি মৌচাকে সাধারণত তিন শ্রেণির মৌমাছি থাকে। রানী মৌমাছি, যা প্রজননে অংশ নেয়। এছাড়া ড্রোন বা পুরুষ এবং কর্মী মৌমাছি থাকে।
২০১৯ সালে জাপানে রফতানি হয়েছে ৬৪ দশমিক ৫ ভাগ মধু। আর বিশ্বের মোট রফতানিকৃত মধু থেকে আয় ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪২ হাজার মার্কিন ডলার এবং আমদানিতে মোট ব্যয় ১১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পায়নে ও কারুশিল্পে মমের চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক প্যাকেট (৬০০ গ্রাম) পরাগরেণুর খুচরা বাজারে মূল্য তিন থেকে চার হাজার টাকা। তবে রাজকীয় জেলি ও মৌবিষের বাজার আমাদের দেশে এখনও তৈরি হয়ে উঠেনি। বিশ্ববাজারে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। বাংলাদেশের মাঠ ফসল, শস্য চক্র ও সময় বিবেচনা করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন সম্ভব।