পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আটটি ব্যাংক মন্দ বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির বাহিরে আছে আরও পাঁচটি ব্যাংক। সব মিলিয়ে ১২টি ব্যাংকের ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। যার সিংহভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা ডিসেম্বর ১৯ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংক ব্যবস্থার ঋণের শ্রেণিমান অনুযায়ী, নির্ধারিত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ১২টি ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক হলো বেসিক, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে ডিসেম্বর প্রান্তিকে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের ৮১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ক্ষতিজনক ঋণ। যা এক বছর আগে ছিল ৮০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বা ৮৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে প্রভিশন রেখেছে ৫৪ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। তবে একক ব্যাংক বিবেচনায় এর পরিমাণ আরও বেশি। কারণ অনেক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে।
ফলে সার্বিকভাবে প্রভিশন ঘাটতি কমেছে। তবে যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে আলোচিত সময়ে সেই ১২ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির ঘাটতি ৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
এরপর সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ১৫৬ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৮৭৮ কোটি, এবি ব্যাংকের ৬৭৩ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৩৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৮৭ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৪২৫ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্টের ২৭৫ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৯৬ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৬২ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৬৪ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা।