পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোন লিমিটেডকে ফেরত পাঠালো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি)। অডিট আপত্তির দাবির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বিটিআরসিকে ১০০ কোটি টাকা জমা দিতে ফিরিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) হোটেল সোনারগাঁওয়ে আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে গ্রামীণফোন এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত জানান, ১০০ কোটি টাকার চেক নিয়ে বিটিআরসিতে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু বিটিআরসি এই টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে গ্রামীণফোনকে আপাতত দুই হাজার কোটি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। তিন মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এই টাকা জমা দেওয়ার সময় শেষ হবে। নির্দিষ্ট এই সময়ে টাকা জমা দেওয়া না হলে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির দাবি করা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপর হাইকোর্টের জারি করা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলেও তখন সতর্ক করে দেয় আদালত।
সংবাদ সম্মেলনে হোসেন সাদাত বলেন, ‘এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো অডিট দাবির যথার্থতা বিবেচনায় এনে একটি সমাধানে পৌঁছানো– যেটি চলমান আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে বিকল্প একটি উদ্যোগ। মহামান্য হাইকোর্ট অডিট দাবি আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু এই অডিট দাবির যথার্থতা নিয়ে কোনো মতামত দেননি।’
হোসেন সাদাত জানিয়েছেন, আদালত যে রায় দেবেন সেই রায়ের পর তারা কী পদক্ষেপ নেবেন সেটি তখন ঠিক করবেন। তবে তারা এই পাওনা দাবির ইস্যুটি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা চান। আর সেজন্যই তারা টাকা ডিপোজিট করতে গিয়েছিলেন।
এদিকে উচ্চ আদালতের দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশনার বিরুদ্ধে গ্রামীণফোনের করা রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। গত ২৬ জানুয়ারি করা ওই আবেদনে জিপি দুই হাজার কোটি টাকার পরিবর্তে ৫৭৫ কোটি টাকা দিতে চেয়েছে। আর এই টাকা তারা এক বছরে ১২টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে চায়।
এমন পরিস্থিতিতে ১০০ কোটি টাকা জমা দিতে যাওয়ার গ্রামীণফোনের এই প্রক্রিয়াকে আকস্মিক বলছে বিটিআরসির কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রামীণফোন সত্যিকার অর্থে কী চায় আমরা তা বুঝতে পারছি না। হঠাৎ কেন তারা একশ কোটি টাকার চেক নিয়ে এলো এবং সংবাদ সম্মেলন করে জানাল তা আমাদের বোধগম্য না।’
এ বিষয়ে বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খাঁন বলেন, ‘যেহেতু গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে মহামান্য আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে, সেক্ষেত্রে বিটিআরসি ওই নির্দেশনার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না।’
অডিট আপত্তির ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বকেয়া রাজস্ব দাবি করে আসছে বিটিআরসি। এর মধ্যে বিটিআরসির নিজস্ব পাওনা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।