মানুষের ভালোবাসা প্রসঙ্গে ইসলাম যা বলে

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০২-২৩ ১৭:০১:২০


প্রকৃতিগতভাবে মানুষ হিসেবে অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও গভীর প্রেম থাকা স্বাভাবিক। তবে এ ভালোবাসার সীমারেখাও আছে। মুসলিম হিসেবে সর্বাধিক ভালোবাসা আল্লাহ ও রাসুলের জন্য হতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের পরিবার, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতে মন্দা পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের আবাসস্থল যা তোমরা ভালোবাসো, তাহলে আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো, আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সত্পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৪)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের কেউ দ্বিন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদের তিনি ভালোবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালোবাসবে, তাঁরা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৪)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে। যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সর্বাধিক প্রিয় হবে। অন্য কোনো ব্যক্তিকে সে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে। আল্লাহ কুফুরি থেকে রক্ষা করার পর আবার তাতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষেপের মতো অপছন্দনীয় হবে।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৪৩)।

স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা : আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কোনো স্ত্রীর প্রতি আমি ঈর্ষান্বিত হইনি। তবে খাদিজা (রা.)-কে না দেখলেও তাঁর প্রতি আমার ঈর্ষা জাগত। রাসুল (সা.) প্রায়ই খাদিজা (রা.)-এর কথা স্মরণ করতেন। অনেক সময় তিনি ছাগল জবাই করে কয়েক ভাগ করে তা খাদিজা (রা.)-এর বান্ধবীদের কাছে পাঠাতেন। তাই আমি রাসুল (সা.)-কে বলতাম, পৃথিবীতে যেন খাদিজা ছাড়া আর কেউ নেই। তখন রাসুল (সা.) বলতেন, সে যেমন উঁচু সম্মানের অধিকারী ছিলেন, তেমনি খুবই বুদ্ধিমতীও ছিলেন। তাঁর থেকে আমার সন্তান হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৩৮১৮)

অপর হাদিসে আয়েশা (রা.) খাদিজা (রা.)-এর কথা বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) ছাগল জবাই করে বলতেন, এগুলো খাদিজা (রা.)-এর বান্ধবীদের কাছে পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাকে রাগান্বিত করি। আমি তাঁকে বললাম, খাদিজা? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। তাঁর ভালোবাসায় আমি সিক্ত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৪৩৫)

ভালোবাসার স্মৃতিবিজড়িত হার : খাদিজা (রা.)-এর বোনের ছেলে আবুল আস বিন রবি বিন আবদুল উজ্জাকে খাদিজা (রা.) অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাই নিজের কন্যা জায়নাব (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের সময় জায়নাব (রা.)-কে খাদিজা (রা.) নিজের একটি হার দেন। আবুল আস বিন রবি (রা.) প্রথমে রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনেনি। তাই মুশরিকরা আবুল আসকে নির্দেশ দেয়, যেন সে মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা জায়নাব (রা.)-কে তালাক দেন। এর বদলে কুরাইশের কোনো নারীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হবে। কিন্তু আবুল আস (রা.) তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমি আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দেব না। আমি চাই না, কুরাইশের কোনো নারী এই স্ত্রীর বদলে আমার কাছে আসুক।’ (আস সিরাতুন নববিয়্যাহ, ২১৪/২)

জায়নাব (রা.) স্বামীর সঙ্গে মক্কায় থাকতেন। মুশরিকদের সঙ্গে বিবাহের নিষেধাজ্ঞার বিধান তখনো অবতরণ হয়নি। দুর্ভাগ্যক্রমে আবুল আস (রা.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বন্দি হয়। মুক্তিপণের মাধ্যমে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বন্দিদের আত্মীয়রা মুক্তিপণ নিয়ে আসছিল।

আবুল আসের মুক্তির জন্য জায়নাব (রা.) বিয়ের সময় মায়ের দেওয়া হারটি প্রেরণ করেন। হারটির ওপর রাসুল (সা.)-এর চোখ পড়তেই তিনি তা চিনে ফেলেন। হারের স্মৃতি তাঁর মনকে বিগলিত করে ফেলল। খাদিজা (রা.)-এর স্মৃতিকথা স্মরণ করিয়ে দিল। তিনি নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। রাসুল (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা ভালো মনে করলে জায়নাবের সম্পদ ফেরত দিয়ে তাঁর বন্দিকে মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্তি দাও। সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, ঠিক আছে। আমরা তাই করলাম।’ রাসুল (সা.) আবুল আসকে মুক্তি দেওয়ার আগমুহূর্তে জায়নাব (রা.)-কে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। কারণ ইসলামের কারণে উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ জরুরি। জায়েদ বিন হারেসা (রা.) ও একজন আনসারি সাহাবিকে মক্কার বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। তারা যেন জায়নাবকে সঙ্গে করে মদিনায় নিয়ে আসে। আবুল আস (রা.) রাসুল (সা.)-এর অনুরোধ রক্ষা করেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং : ২৬৩৬২)

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা : মুসলিমের জীবনের সব কিছু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনামতে হবে। তাই কারো প্রতি অন্তরের ভালোবাসা থাকলে তা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ওই দিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন জালিম ব্যক্তি সেই দিন নিজের উভয় হাত কামড় দিয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সত্পথ অবলম্বন করতাম!’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাঁর ছায়ায় রাখবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ শাসক। আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বেড়ে ওঠা যুবক। মসজিদের সঙ্গে অন্তর জুড়ে থাকা ব্যক্তি। আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য তারা সমবেত হয় এবং তাঁর জন্য তারা পৃথক হয়। মর্যাদাবান ও সুন্দরী কোনো নারী ডাকলে সে বলে দেয়, আমি আল্লাহকে ভয় করি। গোপনে সদকাকারী ব্যক্তি, যার বাঁ হাত জানতে পায় না ডান হাত কী সদকা করেছে। নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণকারী, যার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৬০)

সানবিডি/এনজে