করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চীনের শতাধিক পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির কথা ভাবছে ভারতের বাণিজ্য বিভাগ। প্রধান আমদানি পণ্যের বিস্তৃত জোগানস্বল্পতা নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগামী চলতি সপ্তাহের একটি বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ভারত সরকার ধীরে ধীরে চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্থানীয় বাজার চাহিদা পূরণে দেশীয় পণ্য নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। চীনা কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকার সুবাধে দেশীয় ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য চীন থেকে আমদানীকৃত মধ্যবর্তী বা তৈরি পণ্যে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কথা ভাবছে ভারত।
তবে ওই পণ্যগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে ভারতের উৎপাদন সক্ষমতা সীমিত পর্যায়ের। ভারতের এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এই সময়ে আমদানি বৃদ্ধি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পরিস্থিতি যদি দ্রুত পরিবর্তিত না হয় এবং শিল্প উপকরণগুলোর দাম বাড়তে শুরু করে, তাহলে বর্ধিত আমদানি শুল্ক ভোক্তা ও প্রবৃদ্ধিতে বিপরীত প্রভাব ফেলবে।
দ্য কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স সতর্ক করে বলছে, মৌলিক পণ্যের চালান আটকে থাকার বিষয়টি পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর তরফ থেকে বলা হচ্ছে, গত জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই তারা নতুন ক্রয়াদেশ পাচ্ছেন না।
ভারতের বৃহত্তম আমদানি বাজার হচ্ছে চীন। এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিটি থেকে প্রতি বছর ৭ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে ভারত। বিভিন্ন খাতের আমদানিকারকরা এতদিন চীন থেকে আমদানি নিশ্চিত করতে সেখানে ভ্রমণ করতেন, কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কে চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় সেখানকার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোয় ক্রয়াদেশ নিশ্চিত কঠিন হয়ে পড়েছে।
মার্চ থেকে চীন তাদের একটি বা বড় সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দিতে পারে—এ গুজব ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত ভারতের শিল্প খাত।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্থানীয় পরিসংখ্যানের বরাতে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে কভিড-১৯ রোগের কারণে গত জানুয়ারিতে সাংহাই, ইয়াংশানসহ বড় বন্দরগুলোয় জাহাজ নোঙরের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ কমেছে। তবে অন্য দেশগুলো চীন থেকে চালান সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিলেও চীন সরকার তাদের বন্দর বন্ধ করতে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনৈতিক সূত্র।
বৈশ্বিক অর্থবাজার ও অবকাঠামোসংক্রান্ত উপাত্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ কনটেইনার জাহাজ হ্যান্ডলার দেশ হচ্ছে চীন। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক কনটেইনার ট্রাফিকের ৩০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করেছে বেইজিং। গত বছর চীনের বন্দরগুলো দৈনিক গড়ে ৭ লাখ ১৫ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে।
দি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং সম্প্রতি জানায়, কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে চীনের বন্দরগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত অঞ্চলগুলোয় সব বন্দরে সবার স্ক্রিনিং করা এবং যাদের মধ্যে লক্ষণ স্পষ্ট তাদের কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা নিতে পারে।
চীনের সরকারি সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত সরকারের নির্দেশ হচ্ছে, আগামী মে পর্যন্ত সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সুবিধা চালু থাকবে।
এদিকে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমসের (সিবিআইসি) চেয়ারম্যান অজিত কুমার শুল্ক বিভাগের অধিকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন তারা কেন্দ্র সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সব সমুদ্রবন্দর, কার্গো স্টেশন, ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো, কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশনে পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মকর্তা নিয়োগ করে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস