ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ঋণখেলাপী মাত্র ১ শতাংশ বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এজন্য তিনি এসএমই খাতে ঋণ সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান এসএমই পণ্য মেলায় বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ড. মোমেন বলেন, উন্নত দেশে ক্ষুদ্র শিল্পে সহজ কিস্তিতে ঋণ দেয়া হয়। এ খাতকে সহযোগিতা করলে দেশে দরিদ্র থাকবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) খাত নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা কারোই নেই। এজন্য এসব পণ্যকে ঠিকমতো বাজারজাত করা যায় না। তাই এই সম্ভাবনাময় খাতটি এগুচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসএমই সেন্টার রয়েছে। যেখানে প্রণোদনার পাশাপাশি, নীতি সহায়তা এমনকি এ নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে স্কলারশিপও মেলে। একমাত্র ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশে। এখানে উদ্যোক্তাদের মধ্যে সঠিক ধারণা না থাকায় তারা ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা করতে পারে না। কম সুদে ঋণ পায় না, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে নেই তাদের কোন ধারণাও। অথচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
মোমেন বলেন, নারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিলে বাসাবাড়িতেই প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার বাড়বে। এতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেরও প্রসার বাড়বে। তাই এ খাত নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ভাবার সময় এসেছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের বিকাশে দূতাবাস ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ এর বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে। এখানেই সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। আমাদের আরও ৫ শতাংশ দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমাতে হবে। এজন্য এসএমই খাতকে প্রোমোট করতে হবে।
শিল্পসমৃদ্ধ দেশের ৯০ শতাংশই এসএমই দিয়ে নিজেদের গড়ে তুলেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মাত্র ২৫ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে। এ খাতে আরও উন্নতির বিশেষ প্রয়োজন আছে। মন্ত্রী জানান, উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১৯৫ জন নারী এবং ১০১ জন পুরুষ অংশ নিয়েছেন এ মেলায়। নারীর ক্ষমতায়নে এটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলো এখনও অবহেলিত রয়ে গেছে। এসএমই খাতের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে অভ্যন্তরীণভাবে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। বাড়বে মোট দেশজ উৎপাদন। তবে আর্থিক সহায়তা না পাওয়া, ব্যবস্থাপনা সমস্যা, অর্থায়নে প্রবেশাধিকার, নীতিগত অসঙ্গতি ও আমলাতান্ত্রিক কিছু বড় চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের এসএমই খাত উন্নতি করতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন উদ্যোক্তারা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প সচিব মোঃ আবদুল হালিম, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
গত বুধবার (৪ মার্চ) শুরু হয় অষ্টম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত।
মেলায় সারাদেশের ২৯৬টি এসএমই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তারা ৩০৯টি স্টলে নিজেদের পণ্য প্রদর্শন করছে। পাশাপাশি এ মেলায় রয়েছে ক্রেতা ও বিক্রেতা মিটিং বুথ, রক্তদান কর্মসূচী, মিডিয়া সেন্টারসহ অনলাইন পণ্য মার্কেটিং বিষয়ক স্টল।