রাজশাহীর সংলগ্ন পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় বাবা শামীম (৪০) ও তার মেয়ে রশ্মি খাতুনের (১০) মরদেহ একসঙ্গে ভেসে উঠেছে। শনিবার (০৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।
মরদেহ উদ্ধার হওয়া শামীম নিখোঁজ কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমার চাচা। এখন পর্যন্ত কনে পূর্ণিমা, খালা আঁখি ও ফুফাতো বোনের মেয়ে রুবাইয়ার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এর আগে আজ শনিবার সকালে পদ্মার ভাটিতে চারঘাটের ইউসুফপুর বিওপির সামনে থেকে পূর্ণিমার চাচি ও শামীমের স্ত্রী মনি বেগমের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করে বিজিবি।
এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের কাছ থেকে জেলেদের জালে উঠে আসে কনের খালাতো ভাই এখলাসের মরদেহ। বিকেল ৩টার দিকে একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় কনের দুলাভাই রতন আলীর (২৮) মরদেহ।
ঘটনার দিন শুক্রবার উদ্ধার করা হয়েছে রতন আলীর শিশুকন্যা মরিয়ম খাতুনের (৮) মরদেহ। সব মিলে এ পর্যন্ত ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ কনেসহ তিনজন।
এ ঘটনায় প্রাণে বেঁচেছেন রতন আলীর স্ত্রী পূর্ণিমার বড় বোন বৃষ্টি খাতুন (২২)। সকাল থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ ও বিজিবির যৌথ দল। দুপুরে অভিযানে অংশ নেয় বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল। তাদের সঙ্গে স্থানীয় জেলেরাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।
এদিকে সকাল থেকে পদ্মাপাড়ে অপেক্ষা করছেন বর রুমনসহ স্বজনরা। একে একে ভেসে উঠছে মরদেহ, পড়ছে কান্নার রোল। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী চারপাশ। বিপুলসংখ্যক উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন পদ্মাপাড়ে।
মর্মান্তিক এ নৌকাডুবিতে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ৩২ জনকে। এদের মধ্যে বর আসাদুজ্জামান ওরফে রুমন আলী (২৬), কনের বড়বোন বৃষ্টি খাতুন (২২), নৌকার মাঝি খাদিমুল ইসলাম (২৮), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তার (৬)।
উদ্ধারকাজ তদারকি করছেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম। তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া নৌকা দুটি ছিল ডিঙি নৌকা। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল। হঠাৎ একটি নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ওই সময় দমকা হাওয়ায় ডুবে যায় নৌকা দুটি।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার সমন্বয় কেন্দ্রের ফোকাল পয়েন্ট সালাহউদ্দিন আল ওয়াদুদ বলেন, সকাল থেকে যৌথ উদ্ধার অভিযান চলছে। দুপুরে দুর্ঘটনাকবলিত নৌকা দুটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। উজান ও ভাটিতেও উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
তিনি বলেন, নৌকা দুটিতে ৪১ জন আরোহী ছিলেন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৩২ জনকে। মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ছয়জনের। এখনও নিখোঁজ কনেসহ তিনজন। নিখোঁজের স্বজনরা তাদের নাম-পরিচয় জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (০৫ মার্চ) পদ্মার ওপারের পবা উপজেলার চরখিদিরপুর এলাকার ইনসার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রুমনের সঙ্গে একই উপজেলার ডাঙেরহাট এলাকার শাহীন আলীর মেয়ে সুইটি খাতুন পূর্ণিমার বিয়ে হয়।
শুক্রবার (০৬ মার্চ) বরের বাড়ি থেকে বর-কনেকে নিয়ে আসছিল কনেপক্ষ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর ডিসির বাংলো এলাকায় পদ্মা নদীতে ডুবে যায় নৌকাগুলো।