মাস্টার প্ল্যান তৈরির প্রায় পাঁচ বছর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প। আগামী মঙ্গলবার (১০ মার্চ) এই মেগা প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির মঙ্গলবার (একনেক) সভায় তোলা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ( ১৭ হাজার ৭শ ৭৭ হাজার ১৬ লাখ টাকা)। এটি বাস্তবায়ন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
জাপানের কাশিমা ও নিগাতা (পূর্ব) নামের দুটি বন্দরের আদলে গড়ে তোলা হবে দেশের প্রথম এ গভীর সমুদ্র বন্দর। এ বন্দরে থাকবে একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। বন্দরটিতে ভিড়তে পারবে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ । এ বন্দর চালু হলে একদিকে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি পণ্যের হ্যান্ডলিং বাড়বে, অন্যদিকে চাপ কমবে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর।
২০১৬ সালে জাইকা একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে যাতে মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দরের সম্ভাবনার কথা বলা হয়। সেই অনুযায়ী সার্ভেও করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির মঙ্গলবার (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,বর্তমানে দেশে যে কটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে তার কোনোটিই গভীর সমুদ্র বন্দর নয়। ফলে ডিপ ড্রাফটের ভেসেল এ সব বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই ডিপ ড্রাফট ভেসেলের জেটি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য মাতারবাড়িতে সমুদ্র বন্দর নির্মাণ বিষয়ে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প নেওয়া হয়।
জাইকার সার্ভে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ ২ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার নিয়ে ভিড়তে পারে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলম্বো, জহরলাল নেহেরু, করাচি ও চেন্নাই বন্দরে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারে। এ মাতারবাড়িতে অধিক ড্রাফটের জাহাজের সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কন্টেইনার পরিবহনে বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প।
মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি টার্মিনাল থাকবে। এসব টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটের ৮ হাজার টিইইউএস কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের বেশিজাহাজ ভিড়তে পারে না। যার ফলে মাদার ভেসেলগুলো বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। ফলে ফিডার জাহাজে করে কন্টেইনার আনা-নেওয়া করতে হয়। প্রতিদিন ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টিইইউএস আমদানি পণ্য কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের ১৬ মিটার গভীরতার জন্য মাদার ভেসেল ভেড়ার সুযোগ থাকায় একসাথে ৮ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। এরফলে এখান থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে দেশের অন্যন্য বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, বহুমুখী টার্মিনাল ও কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্রাসঙ্গিক সুবিধার ব্যবস্থা এবং সরঞ্জাম ক্রয়, সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পরামর্শক সেবা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গীস বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সংযোগ সড়কসহ মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ভবিষ্যতে এই বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ত্বরিত বন্দর সেবা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সূত্র: সারাবাংলা