রজব মাসে যা করবেন, যা করবেন না
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২০-০৩-০৮ ১৯:৫৪:১৪
মুমিনের ইবাদতের কিছু বিশেষ মৌসুম রয়েছে। যে মৌসুমগুলোতে একজন মুমিন অল্প আমলেও অধিক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারেন। তার মধ্য থেকে একটি অন্যতম মাস হলো রজব মাস। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বিন। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ (সুরা : তাওবাহ, আয়াত : ৩৬)
এখানে চারটি মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খুতবায় রাসুল (সা.) সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেন, ‘তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, অন্যটি হলো রজব।’ (বুখারি, হাদিস : ৩১৯৭, মুসলিম, হাদিস : ১৬৭৯)
অন্য এক হাদিসে আবু বাকরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সময় আবার ঘুরে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। যে পদ্ধতিতে আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিনের মতো। মাসের সংখ্যা ১২টি। তার মধ্যে চারটি হচ্ছে—হারাম মাস। তিনটি পর পর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদা আস-সানি ও শাবান মাসের মাঝখানে থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৬৬২, মুসলিম, হাদিস : ১৬৭৯)
আয়াতে বর্ণিত ‘কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না’ প্রসঙ্গে মুফাসসিররা বলেন, এই মাসগুলোতে কোনো ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ, পারস্পরিক সংঘাত ও একে অন্যকে অবৈধ পন্থায় ঠকানো থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। এখানে রজব মাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে এর ঠিক একটি মাস পরেই আসছে মুমিন জীবনে ইবাদতের সবচেয়ে বড় উপলক্ষ রমজান মাস। কাজেই রমজান মাসে নিজের আত্মিক পরিশুদ্ধি আনয়ন করে যথাযথভাবে ইবাদতে নিবেদিত হওয়ার জন্য রজব মাস থেকে একটু একটু করে সব ধরনের অন্যায়, অনাচার আর নৈতিকতা বিবর্জিত বিষয়াদি পরিত্যাগ করে, বেশি বেশি নফল ইবাদত যেমন দান, সদকা, নফল নামাজ আর বেশি বেশি করে আল্লাহর স্মরণকে সঙ্গী করে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
রজব মাসে উপনীত হওয়ার পর থেকেই বেশি বেশি করে রমজান প্রাপ্তি ও রজব এবং শাবান মাসে বরকত লাভের দোয়া করতে বলা হয়েছে।
হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, রাসুল (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’ (আলমুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯)
এ ছাড়া আমরা রজব ও শাবান মাসে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে পারি, এর দ্বারা রাসুল (সা.)-এর একটি সুন্নত পালনের সঙ্গে সঙ্গে রমজানের দীর্ঘ একটি মাস রোজা পালনের বড় ধরনের একটি প্র্যাকটিসও হয়ে যাবে। যাতে করে রমজানের ফরজ রোজাগুলো পালন আমাদের জন্য সহজতর মনে হবে।
কাজেই রজব মাসের শিক্ষা হলো আমরা যেন এখন থেকেই নিজেদের লাগামকে টেনে ধরি। আমাদের ভাষা আর আমাদের আচরণ যেন আমরা ঠিক করে নিই। আমার দ্বারা যেন কেউ কোনো কষ্ট না পায়। কারণ এখন থেকেই ইবাদতের চূড়ান্ত মৌসুম রমজানের শতভাগ প্রাপ্তি অর্জনের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়।
পাশাপাশি রজব মাসকে ঘিরে কিছু কুসংস্কারও আছে, যেমন রজব মাসে হাজারি রোজা বলতে কোনো রোজা নেই। এটি বানোয়াট। (কিতাবুল মাওদুয়াত, ইবনুল জাওজি : ২/২০৮, তালখিসুল মাওদুয়াত, পৃষ্ঠা ২০৯, তাজকিরাতুল মাওজুয়াত, পৃষ্ঠা ১১৬, আল আসারুল মারুপা, পৃষ্ঠা-৫৮)
এ ছাড়া জাহেলি যুগে এ মাসে পশু জবাই করে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হতো, যাকে ‘আতিরা’ বলা হতো। রাসুল (সা.) এ ধরনের কুসংস্কার থেকে বিরত থাকার আদেশ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৭৩)
তাই রজব মাস ঘিরে এ ধরনের কোনো কুসংস্কারে লিপ্ত হওয়া যাবে না। অনেকের মধ্যে আবার সন্দেহ কাজ করে এই মাসে বিয়েশাদি করা যাবে কি না? রজব মাসে বিয়েশাদি নিষিদ্ধ এমন কোনো নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। তাই এ ধরনের প্রশ্ন করাই অবান্তর।
আসুন! পবিত্র রজব মাসে আমরা রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সব কুসংস্কার থেকে বিরত থাকি। যদি কোনোভাবে সম্ভব হয়, আমাদের দুনিয়াবি কাজগুলোও এই মাসে গুছিয়ে ফেলি, যাতে পবিত্র রমজানে আমরা আল্লাহর ইবাদতে বেশি সময় দিতে পারি।
লেখক : অনুবাদক ও মুহাদ্দিস
ফকিরের বাজার, নেত্রকোনা