যুক্তরাজ্যে ফুড ডেলিভারি ও ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন সেবাগুলোতে বিক্রি যেখানে বাড়ছে, সেখানে ডিপার্টমেন্ট স্টোর, ফ্যাশন চেইন ও রেস্টুরেন্টগুলো বড় ধাক্কা খাচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং সাম্প্রতিক কয়েকটি বন্যায় টেকঅ্যাওয়ে সেবায় নির্ভর করছে দেশটির ভোক্তারা। খবর গার্ডিয়ান।
ধুঁকতে থাকা ব্রিটিশ রিটেইলাররা কয়েক বছর ধরেই বেশ চাপের মুখে রয়েছে। অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হওয়ায় কয়েক হাজার রিটেইল স্টোর বন্ধ হয়েছে। এখন এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ক্রেতা বলছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে হাইস্ট্রিট ও অন্যান্য ব্যস্ততম এলাকা এড়িয়ে চলছেন তারা। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড অপারেটর বার্কলেকার্ড পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট স্টোরের বিক্রি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে এবং রেস্টুরেন্টে বিক্রি কমেছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কার্ডসেবা প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, কিয়ারা ও ডেনিস ঝড়ের কারণে ক্রেতারা বাসায় অবস্থান করায় পোশাক বিক্রি কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
ইতালি ও চীনে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপের আগেই ট্রাভেল এজেন্ট ও এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোর বিক্রি হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৩ ও শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। বিপরীতে নেটফ্লিক্স ও নাউ টিভির মতো ডিজিটাল কনটেন্ট ও সাবস্ক্রিপশন সেবাগুলোর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া টেকঅ্যাওয়ে ও ফাস্টফুডের বিক্রি বেড়েছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম (বিআরসি) ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির উপাত্তেও এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। বিআরসি ও কেপিএমজির উপাত্তে দেখা গেছে, গত মাসে প্রতিষ্ঠিত স্টোরগুলোতে বিক্রি কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। অনলাইনে নন-ফুড বিক্রি যেখানে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে স্টোরগুলোতে কমেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। খাদ্য বিক্রি বেড়েছে ১ শতাংশ।
বিআরসির প্রধান নির্বাহী হেলেন ডিকিনসন জানান, ফ্যাশনসহ রিটেইল খাতে কিয়ারা, ডেনিস ও হোর্হের মতো ঝড়গুলোর মারাত্মক প্রভাব পড়ায় ফেব্রুয়ারিতেও রিটেইল শিল্পের ওপর কালো ছায়া বিরাজ করছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্রিটিশ ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত সত্ত্বেও তা রিটেইল বিক্রি বৃদ্ধিতে তেমন প্রভাব ফেলেনি। অবশ্য ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনাভীতিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।
যুক্তরাজ্যে কেপিএমজির প্রধান পল মার্টিন বলেন, ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর যে ‘বরিস বাউন্সের’ আশা করা হচ্ছিল, তা বাস্তবে ধরা দেয়নি। এখন নভেল করোনাভাইরাস বাজারে তার প্রভাব বিস্তার করছে।
তিনি আরো বলেন, ফেব্রুয়ারিতে একের পর এক ঝড় হানা দিয়েছে। এ কারণে এটা অবাক হওয়ার কোনো বিষয় নয় যে, হাইস্ট্রিটের চেয়ে অনলাইন ভালো ব্যবসা করেছে। তবে নন-ফুড আইটেমের চাহিদা আশঙ্কাজনকভাবে খুব কম।
বিআরসি ও বার্কলেকার্ডের উপাত্তে অবশ্য গত সপ্তাহের হিসাব জায়গা পায়নি, যেখানে ক্রেতারা হন্যে হয়ে টয়লেট রোল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, শুকনো পাস্তা ও টিনজাত টমেটো মজুদ করছে। নৈশক্লাব, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মতো হসপিটালিটি ব্যবসাও ওই উপাত্তে স্থান পায়নি। ওই খাতগুলোতে বিক্রিতে মন্দা চলছে এবং অনেক বুকিং বাতিল হচ্ছে।
মার্টিন বলছেন, আগামী সপ্তাহগুলো রিটেইল খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা শেষে ব্রিটেনের নয়া অর্থমন্ত্রীর কাছে স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করছেন রিটেইলাররা।
বুধবার ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক যে বাজেট পেশ করবেন, তাতে কনজারভেটিভদের ইশতেহারে করা অঙ্গীকারের প্রতিফলনের আশা করছেন রিটেইলাররা।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস