অনেকেই ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন, কেউবা প্রথমবারের মতো জীবিকার তাগিদে ভিটেমাটি বিক্রি করে কিংবা ঋণ নিয়ে যাচ্ছিলেন সৌদি আরব। কিন্তু চীনের প্রাচীর টপকিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে মাঝপথে আটকে গেলেন সৌদি আরবগামী ৬৮ বাংলাদেশি। গত সোমবার ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে বাহরাইনে অবতরণ করেছিলেন তারা। সংযোগ ফ্লাইটে তাদের কর্মস্থল সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সৌদি আরব আগেই বাহরাইনের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে বাহরাইন বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন তারা। এমনকি বাহরাইন থেকেই তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। জানা গেছে, ওই ৬৮ যাত্রীর মধ্যে ৬২ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী।
আটকা পড়া ৬৮ জনের মধ্যে ১৫ জন নতুন ভিসায় ও ৫৩ জন দেশে ছুটি কাটিয়ে নিজ কর্মস্থলে ফিরছিলেন।
এই শ্রমিকদের বিষয়ে বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সোমবার কয়েকজন যাত্রীকে গালফ এয়ারে করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের মঙ্গলবার রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। বাহরাইনের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইটে করে ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে বাংলাদেশের এই নাগরিকেরা বাহরাইনে অবতরণ করেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে বাহরাইনসহ ১৪টি দেশ থেকে সব ধরনের আকাশপথ, স্থলপথ ও নৌপথে যোগাযোগ স্থগিত করে সৌদি আরব। ফলে এই ৬৮ বাংলাদেশি বাহরাইন বিমানবন্দরে আটকা পড়েন।
আটকেপড়া বাংলাদেশি মোহাম্মদ খোরশেদ বলেন, তিনি ১০ বছর সৌদি আরব আছেন। তিন মাসের ছুটিতে বাংলাদেশে যান। বর্তমান ভিসার মেয়াদ মাত্র চার দিন বাকি আছে। এ সময় এই বিড়ম্বনায় চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন তিনি।
যশোরের মাহফুজা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিনি লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে কাজের জন্য প্রথমবারের মতো সৌদি আরব যাচ্ছেন। কিন্তু এখন দেশে ফিরে গেলে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এমনটা হলে ভিটেমাটি বিক্রি করা ছাড়া আর পথ দেখছেন না তিনি।
লেবার কাউন্সেলর শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, খবর আসা মাত্র আমরা এয়ারপোর্টে যোগাযোগ করে আটকেপড়া যাত্রীদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করি। গালফ এয়ার লাইন্সের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করি।
এ বিষয়ে রিয়াদে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে সৌদি আরবের ফ্লাইট বন্ধ, সেহেতু সৌদি আরবে কেউ ফেরত আসতে চাইলে সরাসরি ঢাকা থেকে সৌদি আরব এলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। অন্যথায় তারা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, যদি এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞাকালে কারও ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়, তবে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জোর প্রচেষ্টা চালানো হবে যাতে ওই প্রবাসীকে ফেরত আনা যায়।
সানবিডি/এনজে