চীনের প্রাচীর টপকে ছড়িয়ে পড়া মারণঘাতি নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে এশিয়ার বাজারে এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) চাহিদা কমতে পারে বলে মনে করছিলেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ফলে এ অঞ্চলে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমতির দিকে থাকবে বলেই ধারণা করা হয়েছিল। তবে ঘটেছে উল্টোটা। পণ্যটির দাম না কমে বরং বাড়তে শুরু করেছে। এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে পণ্যটির সরবরাহস্বল্পতা। চলতি সপ্তাহে আগামী এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে এশিয়ার বাজারে এলএনজি সরবরাহ করা কার্গোর সংখ্যা কমে গেছে। তবে জাপানে পণ্যটির দাম কমতির দিকে রয়েছে। খবর রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় আগামী এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২ ডলার ২০ সেন্ট, গত সপ্তাহের তুলনায় যা ২০ সেন্ট বেশি। তবে পণ্যটির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়লেও এখনো রেকর্ড কম দামের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় এশিয়ায় জ্বালানি পণ্যটির দাম সম্প্রতি রেকর্ড কমে যায়।
একই পরিস্থিতি বজায় রয়েছে মে মাসে সরবরাহ চুক্তিতে এলএনজি কার্গোর ক্ষেত্রেও। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এশিয়ার বাজারে মে মাসে সরবরাহ করা চুক্তিতে কার্গো পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাড়ছে দাম। সিঙ্গাপুরভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী জানান, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় এশিয়ার বাজারে কোনো এলএনজি বহনকারী কার্গো ঢুকতে চাচ্ছে না, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের কার্গোগুলো। ফলে সরবরাহ সংকটে এ অঞ্চলে পণ্যটির দাম বাড়ছে।
এদিকে স্পট মূল্য কমে যাওয়ায় এশিয়ার কতিপয় দেশ বাড়তি এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকছেন। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের কয়েকটি সংস্থা পণ্যটির আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া চীনের ক্রেতারাও পণ্যটির ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাহিদা বাড়ায় সুযোগ বুঝে এলএনজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে রফতানিকারকরাও।
এলএনজির দাম বাড়ার পেছনে চীন অন্যতম প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তালিকাভুক্ত কোম্পানি পেট্রোচায়না এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও বাজারে ভারসাম্য ধরে রাখতে যেকোনো মূল্যে প্রাকৃতিক গ্যাস (পাইপলাইন ও এলএনজি) আমদানি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে, যা পণ্যটির দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে পেট্রোচায়না। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মধ্য এশিয়া, মিয়ানমার ও রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে আমদানি করে। আর বাকিটা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি হিসেবে আমদানি করে থাকে।
সানবিডি/এনজে
চীনের গুয়াংঝু গ্যাস এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে ও মে মাসের প্রথমার্ধে সরবরাহ চুক্তিতে দুই কার্গো এলএনজি আমদানি করতে আগ্রহী। এদিকে ভারতের গুজরাট স্টেট পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (জিএসপিসি) চলতি মাস থেকে নভেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে দুটি উত্স থেকে মোট ছয় কার্গো এলএনজি আমদানি করতে আগ্রহী।
তবে জাপানে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় জাপানের অবস্থান শীর্ষে। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে আমদানি করা এলএনজির দাম কমতির দিকে ছিল। ২০১৪ সাল থেকে এলএনজির দামের রেকর্ড সংরক্ষণ করছে জাপানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে রেকর্ড সংরক্ষণের পর থেকে সবচেয়ে কম দামে এলএনজি বিক্রি হয়েছে।
জাপানের মিনিস্ট্রি অব ইকোনমি, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির গড় দাম ছিল ৩ ডলার ৪০ সেন্ট। এর আগের মাসে জাপানে আমদানি করা এলএনজির গড় দাম ছিল ৫ ডলার ৯০ সেন্ট।
জাপানি ট্রেডাররা বলছেন, ফেব্রুয়ারিজুড়ে জাপানে এলএনজি সরবরাহ প্রত্যাশার তুলনায় বেশি ছিল। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বাড়িয়েছিলেন জাপানি আমদানিকারকরা। এ পরিস্থিতি বাজারে এলএনজির দরপতনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
তবে মার্চে এসে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে জাপানের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অনেকটাই শ্লথ হয়েছে। প্রভাব পড়েছে এলএনজির ক্ষেত্রেও। ফলে চলতি মাসে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির গড় দাম আগের মাসের তুলনায় বাড়তে পারে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করবে জাপান সরকার।