চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শোবিজ তারকাসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার যেসব ব্যক্তি আয়করযোগ্য হওয়ার পরও ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের করের আওতায় আনার কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করদাতার সংখ্যা ও আওতা বাড়ানো, কর ফাঁকি রোধ, বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতি পূরণ ও বাজেটের লক্ষ্যপূরণে রাজস্ব আদায়ে নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। সম্প্রতি আয়কর বিভাগের রাজস্ব আহরণের অগ্রগতি ও পর্যালোচনাবিষয়ক এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তাদের খাত ধরে বেশকিছু দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
সভায় উপস্থিত থাকা একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে নতুন ১২ লাখ করদাতা চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে এনবিআর। সেই লক্ষ্যপূরণে এ কার্যক্রম আরো জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে এ বিষয়ে একটি গবেষণামূলক পেপার তৈরি করতে বলা হয়েছে। যাতে করজাল ও করের আওতা বাড়ে।
এছাড়া দেশে অনেক তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী কিংবা সংশ্লিষ্ট কলাকুশলী রয়েছেন, যাদের জীবনযাত্রার মান বেশ বিলাসবহুল। এর পরেও তারা আয়কর দেন না। তাদেরকে কীভাবে করের আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে কমিশনারেটদের বকেয়া কর আদায়, রাজস্বসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি, ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে শুধু মনোযোগ না দিয়ে নতুন নতুন করদাতা খুঁজে বের করা, বিশেষ জোন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ট্যাক্স জিডিপি বাড়ানো, যেসব কর অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে তাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি, সেসব লক্ষ্য পূরণে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়েও সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কর জরিপ ও পরির্দশন) রঞ্জন কুমার ভৌমিক বলেন, যারা করজালের আওতার বাইরে আছেন তাদেরকে কীভাবে করের আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে আমরা শিগগিরই কাজ শুরু করব। কয়েক দিন আগে একটি সভা হয়েছে, সেখানে কোন পদ্ধতিতে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করলে করদাতা ও আওতা বাড়ানোর সুযোগ বাড়বে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রাজস্ব আদায়ে নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করার জন্য সারা দেশে কর জরিপ চলছে। তবে জরিপে যে পরিমাণ করদাতা যুক্ত হন কিংবা কর দাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেন, তার বড় একটা অংশই কর দেন না।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, কর জরিপে সারা দেশে নতুন করদাতা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এছাড়া অভিজাত এলাকাগুলোর বিভিন্ন শপিংমলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে জরিপ চালানো হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ জরিপ চালানো হচ্ছে।
তবে এর আগেও রাজস্ব বোর্ডের করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি কার্যত খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিবেচনায় দেখা গেছে, করভিত্তি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নতুন করদাতা শনাক্ত করার জন্য অতীতে বিভিন্ন সময়ে এনবিআর যখনই কর জরিপ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তাতে তারা খুব একটা সাফল্য পায়নি।
এ বিষয়ে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া এনবিআরের আয়কর বিভাগের সদস্য কানন কুমার রায়
বলেন, এখানে পলিসি এনফোর্সমেন্ট ছাড়া ফিজিক্যালি করদাতা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন ব্যাপার। কারণ জরিপ প্রক্রিয়া করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। যারা কর ফাঁকি দেন, তাদের খুঁজে বের করাও বেশ কঠিন কাজ।
তিনি জানান, গত বাজেটের আগে এনবিআর একটি পলিসি গ্রহণ করেছিল। সেটার বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছু প্রস্তুতিরও বিষয় আছে। তবে সেই পলিসির যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ইফেক্টিভ ট্যাক্স পেয়ারের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। সেটা হচ্ছে আবাসিক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যাদের বৈদ্যুতিক মিটার আছে তাদের টিআইএন নিতে হবে। এটি যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে বড় অংকের কর আদায় করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে ৪৪ লাখ নতুন করদাতা যোগ হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে কর দিচ্ছেন মাত্র ছয় লাখ। আর ১২ লাখ শুধু রিটার্ন সাবমিট করেন। সূত্র: বণিক বার্তা
সানবিডি/ঢাকা/এসএস