নওগাঁ জেলার পোরশা এলাকায় উন্নত জাতের কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা। এ বছর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুশি তারা। জেলায় প্রথম কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরইয়ের সফল চাষ হওয়ায় অনেকেই এখন বাগান দেখতে আসছেন। আগামীতে এ বরইয়ের বাগান আরও বাড়বে বলে মনে করছে চাষি ও কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু বরই চাষের জন্য উপযোগী। এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ১১৬ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের বরই চাষ হয়েছে।
পোরশা উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের যুবক হাফিজুল ইসলাম বেলাল বরই চাষের প্রতি আগ্রহ দেখান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় এ জাতের বরইয়ের চারা খোঁজেন। পরে নাটোরের বাইপাস থেকে চারা সংগ্রহ করেন। তিনিই প্রথম উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের খাতিপুর সোনাডাঙ্গা এলাকায় গতবছরের আগস্ট মাসে ৭ একর জমি ইজারা নিয়ে ১ হাজার ৭৫০টি করে কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরইগাছ রোপণ করেন।
রোপণের তিন মাস পরই গাছে ফুল ধরতে শুরু করে। ইতোমধ্যে তার বাগান থেকে বরই বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলন ভালো, দেখতে সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু এ বরইয়ের বাগান দেখতে আসছেন আশপাশের চাষিরা। আগামীতে এ জাতের বরই চাষের জন্য তারা আগ্রহ প্রকাশ করেন। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করলে আগামী বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হয়।
চাষি হাফিজুল ইসলাম বেলাল বলেন, ‘ইউটিউবে উন্নত জাতের কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরইয়ের উপর একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখি। এরপর চারা সংগ্রহ করি। প্রতিবিঘা জমি ১২ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে ১২ বছরের জন্য ইজারা নেই। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার মতো বরই বিক্রি হয়েছে। আরও দেড় লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। প্রতিমণ বরই ৩ হাজার ২শ টাকা (৮০ টাকা কেজি) দরে পাইকারি বিক্রি করি।’
তিনি বলেন, ‘এ জাতের বরই ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে বাজারে উঠতে থাকে। মার্চের মাঝামাঝি শেষ হয়। বাগান থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো ও অনুকূলে থাকলে আগামীতে দ্বিগুণ ফল আসবে। আগামীতে আরও ১০ বিঘা বাড়িয়ে মোট ৩০ বিঘায় রোপণ করা হবে।’
উপজেলার গাংঙ্গোর গ্রামের বাগান ইজারা নেওয়া মজিবুর রহমান বলেন, ‘১৯ বিঘা বলসুন্দরী বরইয়ের বাগানে ফুল দেখে প্রায় ৮ লাখ ১০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছিলাম। ৩ মাস পরিচর্যা করে সব খরচসহ প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। পানি সমস্যার কারণে গাছ তেমন বাড়তে পারেনি। চট্টগ্রাম থেকে পাইকাররা এসে ৮০-১২০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কিনে নিয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহফুজ আলম বলেন, ‘ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা এখন নতুন নতুন ফসল ও ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই চাষে ফলন বেশি ও দাম ভালো হওয়ায় কৃষকদের ওই জাতের বরই চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর বরই চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
সানবিডি/এনজে