করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর আতঙ্কে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। এদিকে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিক্রি বেড়ে গেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে ফার্মেসী এবং সুপারমার্কেটগুলোতে ভীড় লেগে গেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্য ঘোষণা দিয়েছে যে চাহিদা মেটাতে নিজেরাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার উত্পাদন শুরু করবে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার নির্দিষ্ট সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। তবে সবধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সমান কার্যকর নয়। কোন ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার এই মহামারীর সময়ে সবচেয়ে বেশি কার্যকর সে বিষয়ে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার করোনাভাইরাসের এই মহামারীর সময়ে সবচেয়ে উত্তম।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে এই সংক্রমণ অন্য লোকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণার প্রতিবেদনের বলা হয়েছে যে এটি মলের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের পাশাপাশি ভাইরাস সংক্রামিত যে কোনো কিছু স্পর্শ করে এরপর যদি মুখ বা নাকে স্পর্শ করেন তবে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।
এদিকে, নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে লোকেরা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২৩ বার তাদের মুখে স্পর্শ করে।
সাধারণত গরম পানি এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্যকর এবং সংক্রামক রোগের বিস্তার প্রতিরোধে অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
হালকা গরম পানি এবং সাবান দিয়ে ধোয়ার বিষয়টি হাত থেকে তেলগুলো সরিয়ে দেয়। এরপরও সেখানে জীবাণু থেকে যেতে পারে।
তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলো থেকে রক্ষা করতে পারে, বিশেষত যখন সাবান এবং পানি পাওয়া যায় না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণুর সংখ্যা এবং প্রকার হ্রাস করতে কার্যকর বলে প্রমাণিত।
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দুটি প্রধান প্রকার রয়েছে : অ্যালকোহলভিত্তিক এবং অ্যালকোহল মুক্ত। অ্যালকোহল মিশ্রিত হ্যান্ড স্যানিটাইজারে বিভিন্ন পরিমাণে এবং ধরণের অ্যালকোহল থাকে। এতে সাধারণত ৬০ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ অ্যালকোহল থাকতে পারে।
এতে সাধারণত আইসোপ্রোপিল অ্যালকোহল, ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল) বা এন-প্রোপানল থাকে। অ্যালকোহল বেশিরভাগ জীবাণু হত্যা করতে সক্ষম বলে জানা যায়।
অ্যালকোহল মুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অ্যালকোহলের পরিবর্তে কোয়ার্টারারি অ্যামোনিয়াম যৌগ বিদ্যমান থাকে যা সাধারণত বেনজালকোনিয়াম ক্লোরাইড নামে পরিচিত। এই উপাদান জীবাণু হ্রাস করতে পারে তবে অ্যালকোহলের চেয়ে কম কার্যকর।
অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার এমআরএসএ এবং ই-কোলিসহ বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলতে কার্যকর।
শুধু তাই নয়, এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস, রাইনোভাইরাস, হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস, এইচআইভি এবং মিডল ইস্ট রেসপিরটরি সিন্ড্রোম করোনাভাইরাসসহ (মার্স-সিওভি) অনেকগুলো ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর।
করোনাভাইরাসসহ আরো কিছু ভাইরাসকে ঘিরে থাকা প্রোটিনের আবরণকে আক্রমণ ও ধ্বংস করে অ্যালকোহল। এই প্রোটিন একটি ভাইরাসের বেঁচে থাকা এবং 'মাল্টিপ্লিকেশন'র জন্য অত্যাবশ্যক।
তবে বেশিরভাগ ভাইরাসকে হ্রাস করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকা দরকার। এরও কম অ্যালকোহলসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলতে কম কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এটি কেবল (অ্যালকোহল ৬০ শতাংশ কম) জীবাণুগুলোর বৃদ্ধি হ্রাস করতে পারে কিন্তু একেবারে মেরে ফেলতে পারে না।
এমনকি ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলোও সবধরণের জীবাণু অপসারণ করতে পারে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, নোরোভাইরাস, ক্রিপ্টোস্পরিডিয়াম (ডায়েরিয়ার কারণ হতে পারে যে ভাইরাস) এবং ক্লোস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল (একটি ব্যাকটেরিয়া যা অন্ত্রের সমস্যা এবং ডায়েরিয়ার কারণ) অপসারণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে হ্যান্ড ওয়াশিং অধিক কার্যকর।
সূত্র : দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট
সানবিডি/ঢাকা/এসএস